ঢাকা ১২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রক্ষকই ভক্ষক

দ্বীন মোহাম্মদ থেকে এজেন্ট ব্যাংককে বাঁচাতে চান সাবিনা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

মালিক অসুস্থ থাকায় এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনায় থাকা কর্মচারী নিজেকে ব্যাংকের মালিক দাবি করছেন। এ যেন রক্ষক থেকে বনে গেলেন ভক্ষক। দ্বীন মোহাম্মদ থেকে এজেন্ট ব্যাংককে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলেন নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াছমিন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের মজুমদারহাট ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াছমিন নোয়াখালীর সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সাত্তার মিয়া বাড়ির শহীদ উল্যাহ আনছারের মেয়ে। অন্যদিকে দ্বীন মোহাম্মদ সদর উপজেলার মাইজদী গ্রামের মোহাম্মদ উল্যার ছেলে। জানা যায়, ২০১৮ সালে সাবিনা বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার একটি এজেন্ট ব্যাংক শাখা পরিচালনা শুরু করেন। একমাত্র এজেন্ট ব্যাংক হওয়ায় দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে তিনি শিরীনসহ ৪ নারীকে যুক্ত করেন। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে শিরীনের স্বামী দ্বীন মোহাম্মদকে ব্যাংক পরিচালনার (পজিটিভ পে) দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২৩ সালে মতের অমিল হওয়ায় সেই চার নারীকে লভ্যাংশসহ প্রদান করেন সাবিনা।

দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় দ্বীনকেও। কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে তখনকার স্বাক্ষরিত একটি চেক রেখে দেয়  দ্বীন। ২০২৪ সালে এসে ৩৫ লাখ টাকা লিখে ব্যাংকটির মালিক দাবি করে তিনি দিয়েছেন উকিল নোটিশ। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জবাই করে হত্যা করবেন সাবিনাকে।

এ বিষয়ে সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, আমার সঙ্গে দ্বীনের কোনো লেনদেন ছিল না। তার স্ত্রী নাজমা বেগম আমাদের ব্যাংকের শেয়ার ছিল। আমার অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে দ্বীন দায়িত্বে ছিল। তখন আমার স্বাক্ষরিত চেক ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতেন। এক বছর আগে তার স্ত্রীর শেয়ার আমি কিনে নিয়েছি। তখন থেকে উনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার স্বাক্ষরিত কোনো চেক তার কাছে আছি কিনা। তিনি বলেছেন নাই। আমি তারপর থানায় একটা জিডি করে রেখেছি। বর্তমানে আমাকে উকিল নোটিশ পাঠাইছে যে আমার কাছে নাকি ৩৫ লাখ টাকা পায়। আমাকে জবাই করে হত্যা করবে বলেও সে আমাকে হুমকি দিচ্ছে।

বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুলাইয়ের ২ তারিখ থেকে পজিটিভ পে নোটিশ ফর চেক পেমেন্টের জন্য দ্বীন মোহাম্মদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাবিনা ইয়াছমিনের স্বাক্ষরিত প্রায় দেড় শতাধিক চেক ব্যবহার করেন। তারপর সাবিনা সুস্থ হয়ে ব্যাংকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তারপর মতের অমিল হলে ২৩ সালের ১লা এপ্রিল সিদ্ধান্তক্রমে চার লাখ টাকা মূলধন আর তিন লাখ টাকা লাভ দিয়ে নাজমা বেগম থেকে শেয়ারটি কিনে নেন। যার প্রমাণ হিসেবে একটি লিখিত কাগজ করা হয় যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত উল্যাহ ও দ্বীন মোহাম্মদ সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ ৩৫ লাখ টাকা পাবেন বলে সাবিনাকে একটি উকিল নোটিশ প্রদান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত উল্যাহ বলেন, দ্বীন মোহাম্মদ কোনো টাকা পাবেন- এটা আমাদেদ জানা ছিল না। লেনদেন ছিল দ্বীন মোহাম্মদের স্ত্রী নাজমা বেগমের সঙ্গে।

যেদিন সভা হয়েছিল সেদিন আমাদের উপস্থিতিতে দ্বীন মোহাম্মদের স্ত্রীকে লভ্যাংশসহ সাত লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। এসব বিষয়ে রাজগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর চৌধুরী সেলিম জানেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর চৌধুরী সেলিম বলেন, এটা একটা মীমাংসিত ঘটনা। হঠাৎ করে দ্বীন মোহাম্মদ এসে ৩৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানাচ্ছে। এ সবের কিছু আমার জানা ছিল না। নিজেকে ব্যাংকের মালিক দাবি করে দ্বীন বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে লেনদেন ক্লিয়ার হওয়ার পর ব্যাংক একজন ক্রয় করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমার কাছে সাবিনা ইয়াছমিন ব্যাংকটি বিক্রি করে দেয়। এটা সেই চেক। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো চেক নয়। আমি টাকা পাই তাই উকিলের মাধ্যমে নোটিশ দিয়েছি। ব্যাংক এশিয়ার মাইজদী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানি। একটি ব্যাংক শুরু হলে কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে সাবিনা ইয়াছমিন শেয়ার নিয়েছিলেন। সেটি আবার লভ্যাংশসহ বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেটেল হওয়ার পর যে কাগজপত্র হয়েছে সেখানে কিন্তু দ্বীন মোহাম্মদের স্বাক্ষর আছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রক্ষকই ভক্ষক

দ্বীন মোহাম্মদ থেকে এজেন্ট ব্যাংককে বাঁচাতে চান সাবিনা

আপডেট সময় ১২:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

মালিক অসুস্থ থাকায় এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনায় থাকা কর্মচারী নিজেকে ব্যাংকের মালিক দাবি করছেন। এ যেন রক্ষক থেকে বনে গেলেন ভক্ষক। দ্বীন মোহাম্মদ থেকে এজেন্ট ব্যাংককে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলেন নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াছমিন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের মজুমদারহাট ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াছমিন নোয়াখালীর সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সাত্তার মিয়া বাড়ির শহীদ উল্যাহ আনছারের মেয়ে। অন্যদিকে দ্বীন মোহাম্মদ সদর উপজেলার মাইজদী গ্রামের মোহাম্মদ উল্যার ছেলে। জানা যায়, ২০১৮ সালে সাবিনা বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার একটি এজেন্ট ব্যাংক শাখা পরিচালনা শুরু করেন। একমাত্র এজেন্ট ব্যাংক হওয়ায় দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে তিনি শিরীনসহ ৪ নারীকে যুক্ত করেন। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে শিরীনের স্বামী দ্বীন মোহাম্মদকে ব্যাংক পরিচালনার (পজিটিভ পে) দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২৩ সালে মতের অমিল হওয়ায় সেই চার নারীকে লভ্যাংশসহ প্রদান করেন সাবিনা।

দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় দ্বীনকেও। কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে তখনকার স্বাক্ষরিত একটি চেক রেখে দেয়  দ্বীন। ২০২৪ সালে এসে ৩৫ লাখ টাকা লিখে ব্যাংকটির মালিক দাবি করে তিনি দিয়েছেন উকিল নোটিশ। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জবাই করে হত্যা করবেন সাবিনাকে।

এ বিষয়ে সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, আমার সঙ্গে দ্বীনের কোনো লেনদেন ছিল না। তার স্ত্রী নাজমা বেগম আমাদের ব্যাংকের শেয়ার ছিল। আমার অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে দ্বীন দায়িত্বে ছিল। তখন আমার স্বাক্ষরিত চেক ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতেন। এক বছর আগে তার স্ত্রীর শেয়ার আমি কিনে নিয়েছি। তখন থেকে উনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার স্বাক্ষরিত কোনো চেক তার কাছে আছি কিনা। তিনি বলেছেন নাই। আমি তারপর থানায় একটা জিডি করে রেখেছি। বর্তমানে আমাকে উকিল নোটিশ পাঠাইছে যে আমার কাছে নাকি ৩৫ লাখ টাকা পায়। আমাকে জবাই করে হত্যা করবে বলেও সে আমাকে হুমকি দিচ্ছে।

বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুলাইয়ের ২ তারিখ থেকে পজিটিভ পে নোটিশ ফর চেক পেমেন্টের জন্য দ্বীন মোহাম্মদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাবিনা ইয়াছমিনের স্বাক্ষরিত প্রায় দেড় শতাধিক চেক ব্যবহার করেন। তারপর সাবিনা সুস্থ হয়ে ব্যাংকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তারপর মতের অমিল হলে ২৩ সালের ১লা এপ্রিল সিদ্ধান্তক্রমে চার লাখ টাকা মূলধন আর তিন লাখ টাকা লাভ দিয়ে নাজমা বেগম থেকে শেয়ারটি কিনে নেন। যার প্রমাণ হিসেবে একটি লিখিত কাগজ করা হয় যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত উল্যাহ ও দ্বীন মোহাম্মদ সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ ৩৫ লাখ টাকা পাবেন বলে সাবিনাকে একটি উকিল নোটিশ প্রদান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত উল্যাহ বলেন, দ্বীন মোহাম্মদ কোনো টাকা পাবেন- এটা আমাদেদ জানা ছিল না। লেনদেন ছিল দ্বীন মোহাম্মদের স্ত্রী নাজমা বেগমের সঙ্গে।

যেদিন সভা হয়েছিল সেদিন আমাদের উপস্থিতিতে দ্বীন মোহাম্মদের স্ত্রীকে লভ্যাংশসহ সাত লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। এসব বিষয়ে রাজগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর চৌধুরী সেলিম জানেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর চৌধুরী সেলিম বলেন, এটা একটা মীমাংসিত ঘটনা। হঠাৎ করে দ্বীন মোহাম্মদ এসে ৩৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানাচ্ছে। এ সবের কিছু আমার জানা ছিল না। নিজেকে ব্যাংকের মালিক দাবি করে দ্বীন বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে লেনদেন ক্লিয়ার হওয়ার পর ব্যাংক একজন ক্রয় করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমার কাছে সাবিনা ইয়াছমিন ব্যাংকটি বিক্রি করে দেয়। এটা সেই চেক। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো চেক নয়। আমি টাকা পাই তাই উকিলের মাধ্যমে নোটিশ দিয়েছি। ব্যাংক এশিয়ার মাইজদী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানি। একটি ব্যাংক শুরু হলে কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে সাবিনা ইয়াছমিন শেয়ার নিয়েছিলেন। সেটি আবার লভ্যাংশসহ বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেটেল হওয়ার পর যে কাগজপত্র হয়েছে সেখানে কিন্তু দ্বীন মোহাম্মদের স্বাক্ষর আছে।