ঢাকা ১২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিনেমা হল বিহীন লক্ষ্মীপুর জেলা, নেই বিনোদনের কোন মাধ্যম

” চল যাই চল যাই বাংলা সিনেমা দেখি সিনেমার নাম নাকি পরাণ পাখি ” না, এখন আর দেশের কোথাও দল বেধেঁ দর্শকরা বাংলা সিনেমা দেখতে যায়না। হারিয়ে গেছে বাংলা সিনেমার সেই অতীত ঐতিহ্য। ষাটের  দশক হতে শুরু হয়ে, সওর, আশি, নব্বই দশক পর্যন্ত ছিলো বাংলা সিনেমার সোনালী ঐতিহ্য। ২০০০ সাল পর্যন্ত কোন রকম ভাবে সিনেমা শিল্প টিকে থাকলেও ২০০৪ সালের পর থেকেই পর্যায়ক্রমে ধস নামতে শুরু করে সিনেমা শিল্পের। ভালো গল্প, ভালো অভিনেতা ও দক্ষ নির্মাতার অভাবে মানসম্মত সিনেমা তৈরি কমে যাওয়ার কারণে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অর্থ- লগ্নি কারিরাও ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে সিনেমা নির্মাণ কমে গেছে, মানসম্মত ছবির অভাবে হল মালিকদের লোকসান হচ্ছে কালক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রায় জেলার সিনেমা হল গুলো। সিনেমা হল ভেঙে করা হচ্ছে বহুতল মার্কেট।
সারা দেশে বর্তমানে শ ‘ খানেক সিনেমা হল ও রাজধানী সহ বিভাগিয় শহরে কয়েকটা স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা আছে। সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখা অনেকটাই ব্যয়বহুল হওয়ায় সকলের পক্ষে সিনেমা দেখা সম্ভব  হয়না। সরজমিনে লক্ষ্মীপুর জেলা ঘুরে দেখা যায় চন্দ্রগন্জের স ম তা সিনেমা হল, লক্ষ্মীপুর সদরের ঝুমুর, হ্যাপি হল ও রায়পুরের বাশরী সিনেমা হল দীর্ঘদিন থেকেই বন্ধ। সিনেমা হলের আশেপাশে গড়ে উঠেছে হোটেল, গ্যারেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সিনেমা হলগুলো তালাবদ্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট কারও সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে সার্বিক পরিস্থিতি ও আশেপাশের দোকানদার ও পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় হল গুলো বন্ধ থাকায় জনসাধারণ বিনোদন বিহীন সময় কাটাচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক আলী হোসনে, নুর হোসেন ও সাগর ওয়াহিদ ফরহাদ এর সাথে কথা বলে জানা গেছে রামগতিতে ‘রীতা সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শন করা হয় তবে অনিয়মিত ভাবে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায় প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে তেমন কোন আগ্রহ নেই জনগণের চিও -বিনোদনের কোন ব্যবস্থা করার, অথচ একসময় কিশোর-যুবক, নারীরাও দল বেঁধে  হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো, সিনেমার পর্দায় নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজতো।
চন্দ্রগন্জ বাজারের ব্যবসায়ী শিউলি মেডিকেল হল এর স্বত্বাধিকারী ডা: আবদুল কাদের বাহার এর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র জীবনে বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিলো হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, বন্ধুরা একসঙ্গে হলে যেতাম আনন্দ করতাম সিনেমা স্টাইলে বন্ধুদের সাথে কথা বলতাম, মজা করতাম এখন সব ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন প্রযুক্তির কল্যাণ এখন মানুষ বিশ্বের অনেক কিছু সহজে দেখতে পায় যার ফলে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাছাড়া মানসম্মত সিনেমার অভাবে হল মালিকরাও সিনেমা প্রদর্শন করতে পারেনা, দর্শক আসেনা, খরচের টাকা উঠানো কষ্ট হয়ে যায়  হল মালিকের, যার ফলে পর্যায়ক্রমে হল গুলো বন্ধ হচ্ছে, আমরা বঞ্চিত হচ্ছি বিনোদন থেকে। তিনি আরও বলেন স্মার্ট ফোন, স্মার্ট টিভিতেও সিনেমা দেখা যায় তবে বড় পর্দায় সিনেমা দেখে যে আনন্দ উপভোগ করা যায় মোবাইল কিংবা টিভিতে সেই আনন্দ পাওয়া যায়না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমাদের বর্তমান প্রজন্ম জানাবে না আমাদের দেশে সিনেমা হল ছিলো, তারা কখনো উপলব্দি করতে পারবে না সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার আনন্দ কেমন। হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম জাদুঘরে গিয়ে সিনেমা হলের পর্দা দেখতে হবে।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মসজিদের ভেতরে ধর্মীয় নেতাকে হত্যা

সিনেমা হল বিহীন লক্ষ্মীপুর জেলা, নেই বিনোদনের কোন মাধ্যম

আপডেট সময় ১২:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪
” চল যাই চল যাই বাংলা সিনেমা দেখি সিনেমার নাম নাকি পরাণ পাখি ” না, এখন আর দেশের কোথাও দল বেধেঁ দর্শকরা বাংলা সিনেমা দেখতে যায়না। হারিয়ে গেছে বাংলা সিনেমার সেই অতীত ঐতিহ্য। ষাটের  দশক হতে শুরু হয়ে, সওর, আশি, নব্বই দশক পর্যন্ত ছিলো বাংলা সিনেমার সোনালী ঐতিহ্য। ২০০০ সাল পর্যন্ত কোন রকম ভাবে সিনেমা শিল্প টিকে থাকলেও ২০০৪ সালের পর থেকেই পর্যায়ক্রমে ধস নামতে শুরু করে সিনেমা শিল্পের। ভালো গল্প, ভালো অভিনেতা ও দক্ষ নির্মাতার অভাবে মানসম্মত সিনেমা তৈরি কমে যাওয়ার কারণে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অর্থ- লগ্নি কারিরাও ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে সিনেমা নির্মাণ কমে গেছে, মানসম্মত ছবির অভাবে হল মালিকদের লোকসান হচ্ছে কালক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রায় জেলার সিনেমা হল গুলো। সিনেমা হল ভেঙে করা হচ্ছে বহুতল মার্কেট।
সারা দেশে বর্তমানে শ ‘ খানেক সিনেমা হল ও রাজধানী সহ বিভাগিয় শহরে কয়েকটা স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা আছে। সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখা অনেকটাই ব্যয়বহুল হওয়ায় সকলের পক্ষে সিনেমা দেখা সম্ভব  হয়না। সরজমিনে লক্ষ্মীপুর জেলা ঘুরে দেখা যায় চন্দ্রগন্জের স ম তা সিনেমা হল, লক্ষ্মীপুর সদরের ঝুমুর, হ্যাপি হল ও রায়পুরের বাশরী সিনেমা হল দীর্ঘদিন থেকেই বন্ধ। সিনেমা হলের আশেপাশে গড়ে উঠেছে হোটেল, গ্যারেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সিনেমা হলগুলো তালাবদ্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট কারও সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে সার্বিক পরিস্থিতি ও আশেপাশের দোকানদার ও পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় হল গুলো বন্ধ থাকায় জনসাধারণ বিনোদন বিহীন সময় কাটাচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক আলী হোসনে, নুর হোসেন ও সাগর ওয়াহিদ ফরহাদ এর সাথে কথা বলে জানা গেছে রামগতিতে ‘রীতা সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শন করা হয় তবে অনিয়মিত ভাবে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায় প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে তেমন কোন আগ্রহ নেই জনগণের চিও -বিনোদনের কোন ব্যবস্থা করার, অথচ একসময় কিশোর-যুবক, নারীরাও দল বেঁধে  হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো, সিনেমার পর্দায় নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজতো।
চন্দ্রগন্জ বাজারের ব্যবসায়ী শিউলি মেডিকেল হল এর স্বত্বাধিকারী ডা: আবদুল কাদের বাহার এর সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র জীবনে বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিলো হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, বন্ধুরা একসঙ্গে হলে যেতাম আনন্দ করতাম সিনেমা স্টাইলে বন্ধুদের সাথে কথা বলতাম, মজা করতাম এখন সব ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন প্রযুক্তির কল্যাণ এখন মানুষ বিশ্বের অনেক কিছু সহজে দেখতে পায় যার ফলে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাছাড়া মানসম্মত সিনেমার অভাবে হল মালিকরাও সিনেমা প্রদর্শন করতে পারেনা, দর্শক আসেনা, খরচের টাকা উঠানো কষ্ট হয়ে যায়  হল মালিকের, যার ফলে পর্যায়ক্রমে হল গুলো বন্ধ হচ্ছে, আমরা বঞ্চিত হচ্ছি বিনোদন থেকে। তিনি আরও বলেন স্মার্ট ফোন, স্মার্ট টিভিতেও সিনেমা দেখা যায় তবে বড় পর্দায় সিনেমা দেখে যে আনন্দ উপভোগ করা যায় মোবাইল কিংবা টিভিতে সেই আনন্দ পাওয়া যায়না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমাদের বর্তমান প্রজন্ম জানাবে না আমাদের দেশে সিনেমা হল ছিলো, তারা কখনো উপলব্দি করতে পারবে না সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার আনন্দ কেমন। হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম জাদুঘরে গিয়ে সিনেমা হলের পর্দা দেখতে হবে।