ঢাকা ০২:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, এই ভাষণ জনগণকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং তাদের স্বাধীনতাও এনে দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ-২০২৪’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর পরাধীন থাকা যাবে না। বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে হবে। আর সেই চিন্তা থেকেই তিনি ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার চেতনায়।

তিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আর তারই অংশ হচ্ছে ৭ই মার্চ। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের জাতির পিতা কী বলেছিলেন তার বার বার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এমনকি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা যারা পরবর্তীতে বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে লিখেছেন- ‘উনি যে কি বলে গেলেন আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোনো অ্যাকশনই নিতে পারলাম না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাধারে যেমন স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেন, তেমনি যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে না হয় এবং জনগণ তৎক্ষণাৎ যেন পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয় সে ব্যাপারেও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।

তিনি বলেন একজন নেতার একটি ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের শুধু প্রস্তুতিই দেয়নি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে যে ঢেকে রাখা যায় না। আজ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আজকে আমাদের জাতীয় স্লোগান। ৭ই মার্চের ভাষণ আজ শুধু বাঙালির নয়, ইতিহাসে যেসব নেতারা ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সেই ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে তার ছায়াসঙ্গী বঙ্গমাতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী সেই ভাষণ দেয়ার আগে লিখিত নিয়ে আসেন, কেউ পরামর্শ দেন, নেতারা পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, এখনো মনে আছে আমার সেই সময় আমাদের ছাত্র নেতারা-আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল হক খান তারা সবাই এসেছেন। বলছেন লিডার কাল স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে, না দিলে চলবে না। মানুষ সেটাই চায়। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন ‘আব্বা দুই হাত দুই নেতার কাঁধে রেখে বললেন, সিরাজ- লিডার শ্যুড লিড দ্য ল্যাড, ল্যাড শুড নট লিড দ্য লিডার’। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, পরের দিন মিটিং। আমাদের বাড়িতে ভরা লোকজন, নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন, আসছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন, লিখিত কাগজ বস্তাকে বস্তা হয়ে যাচ্ছে। আমার মা সবগুলো নিয়ে গুটিয়ে রেখে দিলেন। তিনি বলেন, যেকোনো জনসভায় যাওয়ার আগে তিনি একটু আলাদা করে বাবাকে সময় করে দিতেন। তেমনি আলাদা করে তাকে পনেরো মিনিট বিশ্রাম নেয়ার  সুযোগ করে দেন। আমি, রেহানা ও মা সেখানে ছিলাম। আমি বাবার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছিলাম মা কাছে এসে মোড়া টেনে বসে বললেন তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই- অনেকে অনেক কথা বলবে। তোমার কারও কথা শোনার দরকার নেই। তার অনেক কথার মধ্যে এটাই মূল কথা ছিল। এদেশের মানুষের জন্য তুমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছো, তাই তুমি জানো তোমাকে কী বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সেই কথা বলবে। আর কোনো কথা নয়। তিনি বলেন, খবর এসেছিল আমাদের কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তখন হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ে তৈরি। এদিকে লাখো জনতা ছুটে এসেছে কী নির্দেশনা দেবেন নেতা- তা জানতে।

আমার মা ছিলেন একজন বড় গেরিলা: এদিকে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানিরা বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দেশের স্বাধীনতার কথা আপনি কখন থেকে চিন্তা করেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে আর থাকবো না। গতকাল তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা শাখা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ৫৪ সালে নির্বাচনও করেছেন, ৫৬ সালে তিনি জাতীয় পরিষদে ছিলেন। নিয়ম মেনেই কিন্তু এগিয়ে গেছেন। একটি লক্ষ্য স্থির রেখে। যেটা কখনও তিনি মুখে উচ্চারণ করেননি। কিন্তু একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা বা তাদের সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা এটা একটি কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটাই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। যে কাজটা তিনি করতে গিয়েও তাকে করতে দেয়া হয়নি। ১৫ই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। কাজেই এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা জয়বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ই মার্চের ভাষণকে যারা প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি চায় না। তিনি আরও বলেন, তাদের কেন মানুষ ভোট দেবে। সেজন্যই তারা বারবার ইলেকশন বানচাল করে কীভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, বারবার অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা একজন বড় গেরিলা ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা ছিলেন একজন বড় গেরিলা। সেভাবেই তিনি কাজ করেছেন। ছয় দফা আন্দোলন সংঘটিত করার পিছনে তার অনেক অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্‌যাপিত: ওদিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্‌যাপিত হয়েছে।  ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে

আপডেট সময় ০৩:০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, এই ভাষণ জনগণকে শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে এবং তাদের স্বাধীনতাও এনে দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ-২০২৪’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর পরাধীন থাকা যাবে না। বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে হবে। আর সেই চিন্তা থেকেই তিনি ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার চেতনায়।

তিনি তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আর তারই অংশ হচ্ছে ৭ই মার্চ। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের জাতির পিতা কী বলেছিলেন তার বার বার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এমনকি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা যারা পরবর্তীতে বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে লিখেছেন- ‘উনি যে কি বলে গেলেন আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোনো অ্যাকশনই নিতে পারলাম না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাধারে যেমন স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেন, তেমনি যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে না হয় এবং জনগণ তৎক্ষণাৎ যেন পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয় সে ব্যাপারেও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।

তিনি বলেন একজন নেতার একটি ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, গেরিলা যুদ্ধের শুধু প্রস্তুতিই দেয়নি, যুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে যে ঢেকে রাখা যায় না। আজ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আজকে আমাদের জাতীয় স্লোগান। ৭ই মার্চের ভাষণ আজ শুধু বাঙালির নয়, ইতিহাসে যেসব নেতারা ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সেই ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে তার ছায়াসঙ্গী বঙ্গমাতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী সেই ভাষণ দেয়ার আগে লিখিত নিয়ে আসেন, কেউ পরামর্শ দেন, নেতারা পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, এখনো মনে আছে আমার সেই সময় আমাদের ছাত্র নেতারা-আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল হক খান তারা সবাই এসেছেন। বলছেন লিডার কাল স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে, না দিলে চলবে না। মানুষ সেটাই চায়। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন ‘আব্বা দুই হাত দুই নেতার কাঁধে রেখে বললেন, সিরাজ- লিডার শ্যুড লিড দ্য ল্যাড, ল্যাড শুড নট লিড দ্য লিডার’। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, পরের দিন মিটিং। আমাদের বাড়িতে ভরা লোকজন, নেতাকর্মীরা যাচ্ছেন, আসছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন, লিখিত কাগজ বস্তাকে বস্তা হয়ে যাচ্ছে। আমার মা সবগুলো নিয়ে গুটিয়ে রেখে দিলেন। তিনি বলেন, যেকোনো জনসভায় যাওয়ার আগে তিনি একটু আলাদা করে বাবাকে সময় করে দিতেন। তেমনি আলাদা করে তাকে পনেরো মিনিট বিশ্রাম নেয়ার  সুযোগ করে দেন। আমি, রেহানা ও মা সেখানে ছিলাম। আমি বাবার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছিলাম মা কাছে এসে মোড়া টেনে বসে বললেন তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই- অনেকে অনেক কথা বলবে। তোমার কারও কথা শোনার দরকার নেই। তার অনেক কথার মধ্যে এটাই মূল কথা ছিল। এদেশের মানুষের জন্য তুমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছো, তাই তুমি জানো তোমাকে কী বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সেই কথা বলবে। আর কোনো কথা নয়। তিনি বলেন, খবর এসেছিল আমাদের কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তখন হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ে তৈরি। এদিকে লাখো জনতা ছুটে এসেছে কী নির্দেশনা দেবেন নেতা- তা জানতে।

আমার মা ছিলেন একজন বড় গেরিলা: এদিকে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানিরা বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দেশের স্বাধীনতার কথা আপনি কখন থেকে চিন্তা করেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে আর থাকবো না। গতকাল তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা শাখা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ৫৪ সালে নির্বাচনও করেছেন, ৫৬ সালে তিনি জাতীয় পরিষদে ছিলেন। নিয়ম মেনেই কিন্তু এগিয়ে গেছেন। একটি লক্ষ্য স্থির রেখে। যেটা কখনও তিনি মুখে উচ্চারণ করেননি। কিন্তু একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা বা তাদের সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা এটা একটি কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটাই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। যে কাজটা তিনি করতে গিয়েও তাকে করতে দেয়া হয়নি। ১৫ই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। কাজেই এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা জয়বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ই মার্চের ভাষণকে যারা প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি চায় না। তিনি আরও বলেন, তাদের কেন মানুষ ভোট দেবে। সেজন্যই তারা বারবার ইলেকশন বানচাল করে কীভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, বারবার অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা একজন বড় গেরিলা ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা ছিলেন একজন বড় গেরিলা। সেভাবেই তিনি কাজ করেছেন। ছয় দফা আন্দোলন সংঘটিত করার পিছনে তার অনেক অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্‌যাপিত: ওদিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্‌যাপিত হয়েছে।  ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।