ঢাকা ১১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজিবি’কে বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবো: প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:২৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

বিজিবি’কে বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি বিজিবি’তে যুক্ত হওয়ায় এই বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোবল, কর্মউদ্দীপনা এবং দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২৪ উপলক্ষে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এই কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৩৫ কি.মি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানেও সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অত্যন্ত শাস্তিপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে আমরা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে বিজিবিতে সৈনিক পদে মোট ৩৫ হাজার ৫১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ৫৫ হাজার ১৮৭ সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে এবং আমরাই প্রথম বিজিবিতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই পর্যন্ত বিজিবিতে ৯৯৬ জন নারী সৈনিক ভর্তি হয়েছেন। বিজিবি ভিশন-২০৪১ অনুযায়ী এই বাহিনীতে আরও ১৫ হাজার জনবলের পদ সৃজনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। কমব্যাট ড্রেস প্রদানসহ প্রতিটি  ক্ষেত্রেই তারা যেন আরও উন্নত হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে এবং তাদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমুখী ব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এবং মিয়ানমারের সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন, সুন্দরবন এলাকায় দু’টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি নতুন বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ৫৩৯ কি.মি. অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪০২ কি.মি. সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও আরও ২৪২টি নতুন বিওপি তৈরি এবং সীমান্ত থেকে অধিক দূরত্বে আরও ১২৬টি বিওপি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বিওপিগুলোতে ভালো অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার ৩৫টি বিওপিতে ভি-স্যাট প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা সমপ্রসারণ করা হয়েছে। ১৫টিতে এই সুবিধা স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫-২৬শে ফেব্রুয়ারি আধাসামরিক বাহিনীতে সংঘটিত ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা ইতিমধ্যেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। কাজেই আগামীতে বাহিনীতে এমন ঘটনা যেন ঘটতে না পারে। শেখ হাসিনা ওই নৃশংস ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে ‘প্রেরণা’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যও উন্মোচন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে একটি খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে তিনি আধাসামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে ৭২ জন নির্বাচিত বিজিবি সদস্যের মঝে কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বিজিবি’র ঐতিহ্যবাহী দরবারেও অংশ নেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজিবি’কে বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবো: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় ০৬:২৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

বিজিবি’কে বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি বিজিবি’তে যুক্ত হওয়ায় এই বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোবল, কর্মউদ্দীপনা এবং দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২৪ উপলক্ষে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এই কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৩৫ কি.মি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানেও সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অত্যন্ত শাস্তিপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে আমরা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে বিজিবিতে সৈনিক পদে মোট ৩৫ হাজার ৫১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ৫৫ হাজার ১৮৭ সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে এবং আমরাই প্রথম বিজিবিতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই পর্যন্ত বিজিবিতে ৯৯৬ জন নারী সৈনিক ভর্তি হয়েছেন। বিজিবি ভিশন-২০৪১ অনুযায়ী এই বাহিনীতে আরও ১৫ হাজার জনবলের পদ সৃজনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। কমব্যাট ড্রেস প্রদানসহ প্রতিটি  ক্ষেত্রেই তারা যেন আরও উন্নত হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে এবং তাদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমুখী ব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এবং মিয়ানমারের সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন, সুন্দরবন এলাকায় দু’টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি নতুন বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ৫৩৯ কি.মি. অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪০২ কি.মি. সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও আরও ২৪২টি নতুন বিওপি তৈরি এবং সীমান্ত থেকে অধিক দূরত্বে আরও ১২৬টি বিওপি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বিওপিগুলোতে ভালো অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্ভর ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার ৩৫টি বিওপিতে ভি-স্যাট প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে টেলিফোন সুবিধা সমপ্রসারণ করা হয়েছে। ১৫টিতে এই সুবিধা স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫-২৬শে ফেব্রুয়ারি আধাসামরিক বাহিনীতে সংঘটিত ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা ইতিমধ্যেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। কাজেই আগামীতে বাহিনীতে এমন ঘটনা যেন ঘটতে না পারে। শেখ হাসিনা ওই নৃশংস ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে ‘প্রেরণা’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যও উন্মোচন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে একটি খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে তিনি আধাসামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে ৭২ জন নির্বাচিত বিজিবি সদস্যের মঝে কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বিজিবি’র ঐতিহ্যবাহী দরবারেও অংশ নেন।