ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের মামলা

রাজউক পরিদর্শককে ম্যানেজ করেই চলছে সব

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৩৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার বেইলি রোডে গ্রীন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় ভবনটির স্বত্বাধিকারী, ম্যানেজার, রেস্টুরেন্ট মালিকসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। রমনা থানার এসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মামলার বাদী হয়েছেন। প্রধান আসামি করা হয়েছে চুমুক ফাস্ট ফুডের মালিক আনোয়ারুল হক (২৯)কে । এ ছাড়া গ্রীন কোজি কটেজ ভবনের স্বত্বাধিকারী আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪০) ও কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক মো. সোহেল সিরাজ (৩৪)কে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরস্পর যোগসাজোশে অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিদগ্ধ ও শ্বাস নালীতে ধোঁয়া প্রবেশ করে জীবন বিপন্নসহ মারাত্মক জখম ও এর ফলে মৃত্যু ঘটানো এবং ক্ষতিসাধন করার অপরাধের কথা বলা হয়েছে। মামলায় ধারা দেয়া হয়েছে ৩০৪এ/৩০৭/৩৩৮/৪৩৬/৪২৭/১০৯/৩৪। বাদী এজাহারের এক অংশে বলেছেন, আসামি ও অন্যান্য রেস্টুরেন্ট মালিকরা নিয়ম না মেনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দোকান পরিদর্শক কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে ওই ভবনে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট দিয়ে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে আসছিল। এ ছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহার করার জন্য ফায়ার সার্ভিস থেকেও কোনো অনুমতি নেয়নি তারা।

এদিকে, ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার ও চা চুমুকের দুই মালিকসহ ৪ জনের প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডকৃতরা হলেন-কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান, চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুল। এর আগে তাদের গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার মিলটন তাদের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে  জানতে পারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামক সাততলা ভবনের নিচ তলায় চুমুক নামীয় রেস্টেুরেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে ভবনটিতে আগুন লেগে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ও ধোঁয়া ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্টে আগত নারী, পুরুষ, শিশু ও অন্যান্য দোকানে আগত ক্রেতা ও ভবনের কর্মরত লোকজনের চিৎকার। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আর্তনাদ এবং ছুটাছুটি করছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং অগ্নিদগ্ধ-আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভবনটির স্বত্বাধিকারী এবং ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশকিছু রেস্টেুরেন্ট ও দোকান ভাড়া দেয়। রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না মেনে  রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলা ব্যবহার করে। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য আসামিসহ ভবন স্বত্ত্বাধিকারী এবং ম্যানেজারের যোগসাজাশে চুমুক ফাস্ট ফুড, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট, মেজবানি রেস্টুরেন্ট, খানাস ফ্লাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেষ্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার, ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিজ্জাইন, ফোকো, এম্ব্রোশিয়া নামের রেস্টুরেন্ট মালিকরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে এবং জননিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ, বিপদজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিল। ভবনটির নিচতলায় থাকা রেস্টুরেন্টের রান্নার কাজে অবহেলা ও অসাবধানতামূলকভাবে মজুত করে রাখা এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং এই আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট-দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরে আসামিসহ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্যিক সনদ নেয়। ভবনটির যে সকল ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট আছে সেই মালিকরা রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তারা অগ্নি নির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ অন্যান্য ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতি রাখে নাই। এমনকি ভবনে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নাই। তিনি আরও বলেছেন, গ্রিন কোজি কটেজের স্বত্বাধিকারী ও ম্যানেজার রেস্টুরেন্টের মালিকদের কাছে ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম অমান্য করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করার জন্য ভাড়া দিয়েছেন। আসামিরা ও অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মালিক এবং ম্যানেজার যথাযথ নিয়ম না মেনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর দোকান পরিদর্শক কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট স্থাপন করে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আসামিসহ ভবন স্বত্বাধিকারীর এমন অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে ও শ্বাসনালিতে ধোঁয়া প্রবেশ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৪৬ জন মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে।

এই ভবনে থাকা খাবারের দোকানের মধ্যে কাচ্চি ভাই একটি পরিচিত নাম। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের শাখা আছে। ২০১৯ সালের মার্চে শুরু করা এই কাচ্চি ভাই রেস্তরাঁয় মূলত কাচ্চিই বিক্রি হয়। ঘটনার দিন লিপইয়ার হিসেবে ওই দিন কাচ্চি ভাইয়ে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। এ কারণে সেখানে ক্রেতার ভিড় বেশি ছিল।

মর্গে পড়ে আছে দুই লাশ: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানী হয়। এদেরমধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার বিকালে কেএম মিনহাজ (২৫) নামের এক যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল থেকে লেখাপড়া শেষ করে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন। এর আগে গতকাল সকালে আগুনের ঘটনায় নিহত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪), তার স্ত্রী মেহেরুন নিসা জাহান হেলালি (২৪) এবং তাদের সাড়ে ৩ বছর বয়সী মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল মর্গে আরও দুটি দেহ হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। এদের মধ্যে এক নারী সাংবাদিকের পরিচয় শনাক্তে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ডিএনএ টেস্টের পর তার মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।

নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা: নিহত নারী সাংবাদিকের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে  ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়াতে তার মরদেহ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। মর্গে পড়ে আছে তার মরদেহ। তাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামেই চিনতেন তার সহকর্মীরা। তিনি সনাতন ধর্মের বলেই সবাই জানতেন। এই নামে তিনি একটি ফেসবুক আইডিও চালাতেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মরদেহ নিতে শুক্রবার ঢাকায় আসেন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা সাবরুল আলম সবুজ। তিনি দাবি করেন, নিহত নারী সাংবাদিক তার মেয়ে এবং নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নয়, প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন। ফলে মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। পুলিশ বলছে, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তার মা-বাবা দাবি করা ব্যক্তির কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ওই নারীর মরদেহ নিতে কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে বাবা ও মা দাবি করা সবুজ শেখ ও বিউটি বেগম ছাড়া অন্য কেউ আসেননি। এরই মধ্যে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষায় দেখা যায় এনআইডিতে তার নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবে নিবন্ধিত। বাবার নাম সবুজ শেখ, মায়ের নাম বিউটি বেগম। বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে। অভিশ্রুতির বাবা দাবি করা সবুজ শেখ বলেন, ডিএনএ টেস্টের নমুনা নেয়া হয়েছে। এরপর হয়তো মেয়ের মরদেহ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেবে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের মামলা

রাজউক পরিদর্শককে ম্যানেজ করেই চলছে সব

আপডেট সময় ০৪:৩৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০২৪

ঢাকার বেইলি রোডে গ্রীন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় ভবনটির স্বত্বাধিকারী, ম্যানেজার, রেস্টুরেন্ট মালিকসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। রমনা থানার এসআই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মামলার বাদী হয়েছেন। প্রধান আসামি করা হয়েছে চুমুক ফাস্ট ফুডের মালিক আনোয়ারুল হক (২৯)কে । এ ছাড়া গ্রীন কোজি কটেজ ভবনের স্বত্বাধিকারী আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪০) ও কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক মো. সোহেল সিরাজ (৩৪)কে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরস্পর যোগসাজোশে অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিদগ্ধ ও শ্বাস নালীতে ধোঁয়া প্রবেশ করে জীবন বিপন্নসহ মারাত্মক জখম ও এর ফলে মৃত্যু ঘটানো এবং ক্ষতিসাধন করার অপরাধের কথা বলা হয়েছে। মামলায় ধারা দেয়া হয়েছে ৩০৪এ/৩০৭/৩৩৮/৪৩৬/৪২৭/১০৯/৩৪। বাদী এজাহারের এক অংশে বলেছেন, আসামি ও অন্যান্য রেস্টুরেন্ট মালিকরা নিয়ম না মেনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দোকান পরিদর্শক কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে ওই ভবনে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট দিয়ে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে আসছিল। এ ছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহার করার জন্য ফায়ার সার্ভিস থেকেও কোনো অনুমতি নেয়নি তারা।

এদিকে, ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার ও চা চুমুকের দুই মালিকসহ ৪ জনের প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডকৃতরা হলেন-কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান, চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুল। এর আগে তাদের গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনছার মিলটন তাদের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে  জানতে পারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামক সাততলা ভবনের নিচ তলায় চুমুক নামীয় রেস্টেুরেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে ভবনটিতে আগুন লেগে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ও ধোঁয়া ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্টে আগত নারী, পুরুষ, শিশু ও অন্যান্য দোকানে আগত ক্রেতা ও ভবনের কর্মরত লোকজনের চিৎকার। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আর্তনাদ এবং ছুটাছুটি করছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং অগ্নিদগ্ধ-আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভবনটির স্বত্বাধিকারী এবং ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশকিছু রেস্টেুরেন্ট ও দোকান ভাড়া দেয়। রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না মেনে  রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলা ব্যবহার করে। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য আসামিসহ ভবন স্বত্ত্বাধিকারী এবং ম্যানেজারের যোগসাজাশে চুমুক ফাস্ট ফুড, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট, মেজবানি রেস্টুরেন্ট, খানাস ফ্লাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেষ্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার, ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিজ্জাইন, ফোকো, এম্ব্রোশিয়া নামের রেস্টুরেন্ট মালিকরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে এবং জননিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ, বিপদজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিল। ভবনটির নিচতলায় থাকা রেস্টুরেন্টের রান্নার কাজে অবহেলা ও অসাবধানতামূলকভাবে মজুত করে রাখা এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং এই আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট-দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরে আসামিসহ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাণিজ্যিক সনদ নেয়। ভবনটির যে সকল ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট আছে সেই মালিকরা রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তারা অগ্নি নির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ অন্যান্য ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতি রাখে নাই। এমনকি ভবনে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নাই। তিনি আরও বলেছেন, গ্রিন কোজি কটেজের স্বত্বাধিকারী ও ম্যানেজার রেস্টুরেন্টের মালিকদের কাছে ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম অমান্য করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করার জন্য ভাড়া দিয়েছেন। আসামিরা ও অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মালিক এবং ম্যানেজার যথাযথ নিয়ম না মেনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর দোকান পরিদর্শক কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট স্থাপন করে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আসামিসহ ভবন স্বত্বাধিকারীর এমন অবহেলা, অসাবধনতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে ও শ্বাসনালিতে ধোঁয়া প্রবেশ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৪৬ জন মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে।

এই ভবনে থাকা খাবারের দোকানের মধ্যে কাচ্চি ভাই একটি পরিচিত নাম। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাদের শাখা আছে। ২০১৯ সালের মার্চে শুরু করা এই কাচ্চি ভাই রেস্তরাঁয় মূলত কাচ্চিই বিক্রি হয়। ঘটনার দিন লিপইয়ার হিসেবে ওই দিন কাচ্চি ভাইয়ে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। এ কারণে সেখানে ক্রেতার ভিড় বেশি ছিল।

মর্গে পড়ে আছে দুই লাশ: বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানী হয়। এদেরমধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার বিকালে কেএম মিনহাজ (২৫) নামের এক যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল থেকে লেখাপড়া শেষ করে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন। এর আগে গতকাল সকালে আগুনের ঘটনায় নিহত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪), তার স্ত্রী মেহেরুন নিসা জাহান হেলালি (২৪) এবং তাদের সাড়ে ৩ বছর বয়সী মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল মর্গে আরও দুটি দেহ হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। এদের মধ্যে এক নারী সাংবাদিকের পরিচয় শনাক্তে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ডিএনএ টেস্টের পর তার মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।

নারী সাংবাদিকের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা: নিহত নারী সাংবাদিকের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে  ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়াতে তার মরদেহ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। মর্গে পড়ে আছে তার মরদেহ। তাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামেই চিনতেন তার সহকর্মীরা। তিনি সনাতন ধর্মের বলেই সবাই জানতেন। এই নামে তিনি একটি ফেসবুক আইডিও চালাতেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মরদেহ নিতে শুক্রবার ঢাকায় আসেন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা সাবরুল আলম সবুজ। তিনি দাবি করেন, নিহত নারী সাংবাদিক তার মেয়ে এবং নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নয়, প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন। ফলে মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। পুলিশ বলছে, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তার মা-বাবা দাবি করা ব্যক্তির কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ওই নারীর মরদেহ নিতে কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে বাবা ও মা দাবি করা সবুজ শেখ ও বিউটি বেগম ছাড়া অন্য কেউ আসেননি। এরই মধ্যে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষায় দেখা যায় এনআইডিতে তার নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবে নিবন্ধিত। বাবার নাম সবুজ শেখ, মায়ের নাম বিউটি বেগম। বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে। অভিশ্রুতির বাবা দাবি করা সবুজ শেখ বলেন, ডিএনএ টেস্টের নমুনা নেয়া হয়েছে। এরপর হয়তো মেয়ের মরদেহ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেবে।