ঢাকা ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। গতকাল রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশে সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ৫টা ৫৭ মিনিটে প্রেসিডেন্ট জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের পর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ চত্বর। এরপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সকলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এই সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষ থেকে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এদিকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ওদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠক কখনো ঘোষক হতে পারে না। আজ আমাদের দেশের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক হয়। এত বছর পরও সেই বিতর্ক চলছে। আমাদের বক্তব্য, ঘোষণার পাঠক ঘোষক হতে পারে না। তিনি বলেন, আবুল কাশেম, এম এ হান্নান, অনেকেই ঘোষণা পাঠ করেছেন। সেখানে জেনারেল জিয়াও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে ঘোষক? এ বিতর্কের অবসান তখনই হবে যখন আমরা সত্যের অনুসন্ধান করতে যাবো। সেটা হচ্ছে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার ম্যান্ডেট এই অঞ্চলের জনগণের পক্ষ থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পেয়েছিল। আর কারও কোনো বৈধ অধিকার নেই স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার। ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে এত বছর পর আমাদের ভাবতে হচ্ছে এ দেশেরই মানুষ, এ দেশেরই অগণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ে। যারা আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অন্তরায় সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আজ আমাদের শপথ, বিএনপি’র নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি বিষয়টিকে সংহতকরণে বাধা বা অন্তরায় হয়ে আছে, এই অপশক্তিকে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরাজিত করবো, প্রতিহত করবো।

অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যে আদর্শের জন্য তার নাম ছিল গণতন্ত্র। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটিই প্রশ্ন সেই গণতন্ত্র কোথায় গেল, সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায় গেল? তিনি বলেন, একটি সরকার এ দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, বাস্তবে করছে একদলীয় শাসন।

তারা এবার করেছে বাকশাল-২। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা আজকে অত্যন্ত স্পষ্ট, যখন সেই ২৫শে মার্চের কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেদিন আজকের আওয়ামী লীগ, যারা আজকে নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে, তারা সেদিন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ দিতে পারবে, আমরা সেই উত্তর দিতে চাই না। বিএনপি’র এই নেতা বলেন, যে কারণে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করে তুলে ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেদিনের মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে, পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষিত অত্যাচারী হায়েনার মতো অত্যাচারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুধু বাংলাদেশে নয়, সেদিন ভেসে এসেছিল, আমি মেজর জিয়া বলছি, তিনি বলেছিলেন, ‘আই এম মেজর জিয়া হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার দ্যাট ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হ্যাজ বিন এস্টাবলিশ’ সেই কথা  ইথারে ভেসে শুধু বাংলাদেশে নয়, সেই কথা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল, একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।

এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আইএসপিআর জানায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর (তেজগাঁও) এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ছয়টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার শুভেচ্ছা: এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। এক শুভেচ্ছা বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি জে. ব্লিনকেন বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই বার্তায় ব্লিনকেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকটে সাড়া দেয়া, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার আরেকটি বছর উদ্যাপন করছে, তখন আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং এই প্রচেষ্টাসমূহ বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ  করবে। দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, আমি এই বিশেষ দিনে সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আগামী বছরগুলোতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য আমরা উন্মুখ।

চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনকে লেখা শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অবিচলভাবে তার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে, তার অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জনগণের জীবিকা উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি দৃঢ়ভিত্তি স্থাপন করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন যে, চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালীতর হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমাদের দুই দেশ দৃঢ় এবং গভীর রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ব্যবহারিক সহযোগিতা উপভোগ করেছে, যা দুই  দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে। শি জিনপিং আরও বলেন, তিনি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে  বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন। তিনি বলেন, রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় বিকশিত হচ্ছে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রেক্ষিতে নানা যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী এবং উভয়ের স্বার্থরক্ষা হবে। রুশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং তার দায়িত্বশীল কাজে নতুন সাফল্য এবং বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সেই চেয়ারম্যানকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ

আপডেট সময় ১২:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। গতকাল রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশে সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ৫টা ৫৭ মিনিটে প্রেসিডেন্ট জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের পর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ চত্বর। এরপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সকলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এই সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষ থেকে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এদিকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ওদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠক কখনো ঘোষক হতে পারে না। আজ আমাদের দেশের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্ক হয়। এত বছর পরও সেই বিতর্ক চলছে। আমাদের বক্তব্য, ঘোষণার পাঠক ঘোষক হতে পারে না। তিনি বলেন, আবুল কাশেম, এম এ হান্নান, অনেকেই ঘোষণা পাঠ করেছেন। সেখানে জেনারেল জিয়াও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে ঘোষক? এ বিতর্কের অবসান তখনই হবে যখন আমরা সত্যের অনুসন্ধান করতে যাবো। সেটা হচ্ছে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার ম্যান্ডেট এই অঞ্চলের জনগণের পক্ষ থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পেয়েছিল। আর কারও কোনো বৈধ অধিকার নেই স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার। ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে এত বছর পর আমাদের ভাবতে হচ্ছে এ দেশেরই মানুষ, এ দেশেরই অগণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিয়ে। যারা আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অন্তরায় সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আজ আমাদের শপথ, বিএনপি’র নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি বিষয়টিকে সংহতকরণে বাধা বা অন্তরায় হয়ে আছে, এই অপশক্তিকে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরাজিত করবো, প্রতিহত করবো।

অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে এবং আদর্শ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, যে আদর্শের জন্য তার নাম ছিল গণতন্ত্র। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজকে ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের একটিই প্রশ্ন সেই গণতন্ত্র কোথায় গেল, সেই দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি কোথায় গেল? তিনি বলেন, একটি সরকার এ দেশে এসেছে, সে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র, বাস্তবে করছে একদলীয় শাসন।

তারা এবার করেছে বাকশাল-২। এটা আমার কথা নয়, এটা বিশ্ববাসীর কথা। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা আজকে অত্যন্ত স্পষ্ট, যখন সেই ২৫শে মার্চের কালরাতে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেদিন আজকের আওয়ামী লীগ, যারা আজকে নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি বলে দাবি করে, তারা সেদিন পলায়নপর ভূমিকা নিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ দিতে পারবে, আমরা সেই উত্তর দিতে চাই না। বিএনপি’র এই নেতা বলেন, যে কারণে স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উঁচু করে তুলে ধরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেদিনের মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে, পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষিত অত্যাচারী হায়েনার মতো অত্যাচারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুধু বাংলাদেশে নয়, সেদিন ভেসে এসেছিল, আমি মেজর জিয়া বলছি, তিনি বলেছিলেন, ‘আই এম মেজর জিয়া হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার দ্যাট ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হ্যাজ বিন এস্টাবলিশ’ সেই কথা  ইথারে ভেসে শুধু বাংলাদেশে নয়, সেই কথা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূচিত হয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল, একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতে যাচ্ছে।

এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আইএসপিআর জানায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর (তেজগাঁও) এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ছয়টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার শুভেচ্ছা: এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। এক শুভেচ্ছা বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি জে. ব্লিনকেন বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই বার্তায় ব্লিনকেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকটে সাড়া দেয়া, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার আরেকটি বছর উদ্যাপন করছে, তখন আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং এই প্রচেষ্টাসমূহ বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ  করবে। দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট বলেন, আমি এই বিশেষ দিনে সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আগামী বছরগুলোতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য আমরা উন্মুখ।

চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনকে লেখা শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, বিগত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অবিচলভাবে তার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে, তার অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জনগণের জীবিকা উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি দৃঢ়ভিত্তি স্থাপন করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীনা প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন যে, চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালীতর হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আমাদের দুই দেশ দৃঢ় এবং গভীর রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ব্যবহারিক সহযোগিতা উপভোগ করেছে, যা দুই  দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা নিয়ে এসেছে। শি জিনপিং আরও বলেন, তিনি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে  বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন। তিনি বলেন, রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনায় বিকশিত হচ্ছে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রেক্ষিতে নানা যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী এবং উভয়ের স্বার্থরক্ষা হবে। রুশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং তার দায়িত্বশীল কাজে নতুন সাফল্য এবং বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।