ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুটান পাচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল থিম্পুতে বার্ন ইউনিট করে দেবে ঢাকা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:২২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে তিনটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেইসঙ্গে একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক সই ও চুক্তি নবায়নের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সমঝোতাগুলো হচ্ছে- থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। এছাড়া দুই দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বিদ্যমান চুক্তি নবায়ন করা হয়। এর আগে সকালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ভুটানের রাজা ২৮শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সফরে তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন ভুটানের রানী ও তার পরিবার, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা।

বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা: এদিকে ভুটানের রাজা ও রানী ঢাকার মাটিতে পা রাখার পর হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানী জেৎসুন পেমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় রাষ্ট্রীয় অতিথিকে বরণে বিমানবন্দরে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল অতিথিকে অভিবাদন জানায়। অভিবাদন মঞ্চ থেকে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে রাজা প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন প্রেজেন্টেশন লাইনে অপেক্ষারত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্যদিকে ভুটানের রাজাও তার সফরসঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটান। দীর্ঘ ১১ বছর পর ঢাকায় এলেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। সর্বশেষ, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রাজা ও রানী।

অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে ভুটান, বার্ন ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশওদিকে ভুটানের রাজার সফরে দুই দেশের মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার আওতায় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ। আর কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। এছাড়া ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা হবে দুই দেশের মধ্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং রানী জেৎসুন পেমা বাংলাদেশ সফর করছেন। ভুটানের রাজা বেলা সোয়া ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজা। একান্ত বৈঠক শেষে তারা দুই দেশের প্রতিনিধিদল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দুই দেশের সমঝোতার আওতায় থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে। প্রতিবছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দু’টি আসন বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরী সহযোগিতা দেবে। বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেবে বাংলাদেশ

রাজার সফর সূচি: সফরের দ্বিতীয় দিন আজ (মঙ্গলবার) স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন ভুটানের রাজা। পরে তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বুধবার পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এরপর বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করতে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা। কুড়িগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। সেখানে গার্ড অব অনার দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জলবিদ্যুৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে চুক্তি শিগগির: এদিকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভুটানের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চাই। আমরা ইতিমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য চুক্তি সই করেছি এবং ভারতও আমাদের সহায়তা করেছে। ভুটান থেকে আমদানির সময়ও ভারত আমাদের সহায়তা করবে। খুব শিগগিরই ভুটানের সঙ্গে চুক্তি সই হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জলবিদ্যুৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে এবার চুক্তি সই হবে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আমরা আশা করছি এটি খুব শিগগিরই হবে। হাছান মাহমুদ বলেন, যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) আবার যুক্ত হোক, এজন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমি তাদের বিবিআইএন-এ আবার যোগ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এনেছি। ভুটানের রাজা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে শুনেছেন। মন্ত্রী জানান, ভুটানে বিমানের ফ্লাইট সপ্তাহে মাত্র দু’টি, এটি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। তবে ভুটানে বাংলাদেশিদের ট্রাভেল ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

রাজা-রানীকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন ঘুরিয়ে দেখালেন শেখ রেহানা ও পুতুল: ওদিকে ঢাকায় নেমে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাজা ও রানী। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভুটানের রাজা ও রানীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা এবং নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।  এরপর তিনি জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং স্মারক বইয়ে সই করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার্য কিছু আসবাব ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সেই চেয়ারম্যানকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা

ভুটান পাচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল থিম্পুতে বার্ন ইউনিট করে দেবে ঢাকা

আপডেট সময় ১২:২২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে তিনটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেইসঙ্গে একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক সই ও চুক্তি নবায়নের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সমঝোতাগুলো হচ্ছে- থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। এছাড়া দুই দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা-সংক্রান্ত বিদ্যমান চুক্তি নবায়ন করা হয়। এর আগে সকালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ভুটানের রাজা ২৮শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সফরে তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন ভুটানের রানী ও তার পরিবার, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা।

বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা: এদিকে ভুটানের রাজা ও রানী ঢাকার মাটিতে পা রাখার পর হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানী জেৎসুন পেমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় রাষ্ট্রীয় অতিথিকে বরণে বিমানবন্দরে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল অতিথিকে অভিবাদন জানায়। অভিবাদন মঞ্চ থেকে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে রাজা প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন প্রেজেন্টেশন লাইনে অপেক্ষারত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্যদিকে ভুটানের রাজাও তার সফরসঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সচিব, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটান। দীর্ঘ ১১ বছর পর ঢাকায় এলেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। সর্বশেষ, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রাজা ও রানী।

অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে ভুটান, বার্ন ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশওদিকে ভুটানের রাজার সফরে দুই দেশের মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার আওতায় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ। আর কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। এছাড়া ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা হবে দুই দেশের মধ্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং রানী জেৎসুন পেমা বাংলাদেশ সফর করছেন। ভুটানের রাজা বেলা সোয়া ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজা। একান্ত বৈঠক শেষে তারা দুই দেশের প্রতিনিধিদল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দুই দেশের সমঝোতার আওতায় থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে। প্রতিবছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দু’টি আসন বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরী সহযোগিতা দেবে। বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেবে বাংলাদেশ

রাজার সফর সূচি: সফরের দ্বিতীয় দিন আজ (মঙ্গলবার) স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন ভুটানের রাজা। পরে তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বুধবার পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এরপর বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করতে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা। কুড়িগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। সেখানে গার্ড অব অনার দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জলবিদ্যুৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে চুক্তি শিগগির: এদিকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভুটানের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চাই। আমরা ইতিমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য চুক্তি সই করেছি এবং ভারতও আমাদের সহায়তা করেছে। ভুটান থেকে আমদানির সময়ও ভারত আমাদের সহায়তা করবে। খুব শিগগিরই ভুটানের সঙ্গে চুক্তি সই হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জলবিদ্যুৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে এবার চুক্তি সই হবে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আমরা আশা করছি এটি খুব শিগগিরই হবে। হাছান মাহমুদ বলেন, যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) আবার যুক্ত হোক, এজন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমি তাদের বিবিআইএন-এ আবার যোগ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এনেছি। ভুটানের রাজা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে শুনেছেন। মন্ত্রী জানান, ভুটানে বিমানের ফ্লাইট সপ্তাহে মাত্র দু’টি, এটি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। তবে ভুটানে বাংলাদেশিদের ট্রাভেল ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

রাজা-রানীকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন ঘুরিয়ে দেখালেন শেখ রেহানা ও পুতুল: ওদিকে ঢাকায় নেমে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাজা ও রানী। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভুটানের রাজা ও রানীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা এবং নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।  এরপর তিনি জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং স্মারক বইয়ে সই করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার্য কিছু আসবাব ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।