ঢাকা ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ আবার গন্তব্যে ছুটছে নদীপথে  অনেকে আবার কাজের চাপে নিজে না গেলেও ঝক্কি কমাতে পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাড়িতে। গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাটসহ ঢাকা থেকে বের হওয়া সবক’টি স্টেশনে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ পড়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঈদের ছুটি শুরু না হলেও বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই ভিড় করছে মানুষ। তাদের বেশির ভাগেরই আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল বাসের টিকিট। অনেকে আবার কাউন্টারে এসেও কাটছেন টিকিট। একের পর এক বাস এসে দাঁড়াচ্ছে টার্মিনালের সামনে, আর যে যার গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। গাবতলী টার্মিনালের রয়েল এক্সপ্রেসের কাউন্টারের পেছনে বসে বাসের জন্য অপেক্ষারত আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসের ছুটি শুরু হবে বুধবার থেকে। অন্যান্য অফিসগুলোও একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় তখন অনেক যানজট হতে পারে। তাই আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর এজন্যই গাবতলীতে আসা।

তিনি বলেন, এবার অনেকদিন ছুটি পাচ্ছে মানুষ। তাই বেশির ভাগ মানুষই ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যাবে। এজন্য চাপটা একসঙ্গে পড়তে পারে। ভোগান্তি কমাতে আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছি। ঝিনাইদহগামী পূর্বাশা পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সকলেই অ্যাডভান্স টিকিট কেটে রেখেছেন। কিন্তু অ্যাডভান্স টিকিট কাটলে তার সময় পরিবর্তন বা বাতিল করার সুযোগ নেই। ভাবলাম ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার এখনো দুই-একদিন বাকি রয়েছে, রাস্তায় গাড়ির চাপ শুরুর আগেই বাড়ি জন্য রওনা করি। তাই সরাসরি টার্মিনালে চলে এসেছি। একটু কষ্ট হয়েছে তবে টিকিট পেয়েছি। এখন গাড়ির জন্য অপেক্ষা। মো. ফিরোজ নামে চুয়াডাঙ্গাগামী এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটি পরিবারের সঙ্গে পালন করতে ইতিমধ্যেই অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ আবার পরিবার-পরিজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে সবচেয়ে চাপ বাড়বে আগামী মঙ্গল-বুধবার। রয়েল এক্সপ্রেসের গাবতলী কাউন্টারের  বিক্রয়কর্মী মো. জিয়া বলেন, যাত্রীর পরিমাণ ভালোই, টিকিটও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

এখনো ছুটি শুরু হয়নি। পুরোপুরি ছুটি হলে যাত্রীর পরিমাণ আরও বাড়বে। টার্মিনালটির পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বশির আহমেদ বলেন, যাত্রী সংখ্যা ভালোই, তবে মঙ্গলবার রাত থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, এখন ঈদের সময়ে বেশির ভাগ যাত্রীই আগে থেকে তাদের টিকিট সংগ্রহ করে রাখেন। এরপর কাউন্টারের যাত্রীদের জন্য আমাদের কিছু টিকিটের ব্যবস্থা থাকে। তাই কাউন্টারে এসেও অনেকে টিকিট কাটছেন। যথাসময়ে আমাদের প্রতিটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের কাউন্টার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছুটি শুরু না হলেও ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই আগে আগে চলে যাচ্ছেন। আর ঈদে ঘরে ফেরা এসব মানুষের জন্য আমাদের টাইট শিডিউল চলছে। একটার পর একটা গাড়ি বুক হচ্ছে, টিকিট বিক্রি হচ্ছে, আর যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটছে গাড়ি। তিনি বলেন, অনান্য সময়ে যাওয়া-আসা দুই পথেই যাত্রী থাকে। কিন্তু ঈদের সময়ে যাত্রী ভরে বাস গাবতলী ছাড়লেও ঢাকায় আসে ফাঁকা গাড়ি। তাই অনান্য সময়ের চেয়ে একটু ভাড়া বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, নরাইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের ঢাকা ছাড়ার পছন্দের জায়গা সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী বাস কাউন্টারগুলো। এ ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, ছাতক, বিয়ানীবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন প্রান্তেও এখান থেকে বাস ছেড়ে যায়। রাতে-দিনে একের পর এক বাস যাত্রী নিয়ে সেখান থেকে ছুটে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গতকাল সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে খুলনাগামী ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের অনেক ভিড়। কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল্লাহ বলেন, এখন যারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই আগেই টিকিট নিয়েছিলেন। গাড়ির সব আসনেই যাত্রী। একের পর এক গাড়ি যাত্রী বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ, খুলনা ও পিরোজপুর চলাচলকারী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের কাউন্টারেও ছিল চোখে পড়ার মতো মানুষের উপস্থিতি।

১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। পরিবহনটির কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষারত আব্দুল আজিজ নামে খুলনাগামী এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটির আগে এমনিতেই কাজের অনেক চাপ থাকে। এরপর ঈদের কেনাকাটা। সবমিলে অগ্রিম টিকিট কাটতে পারিনি। তাই সরাসরি কাউন্টারে চলে এসেছি। কাউন্টার থেকে বলেছে- টিকিট হবে তবে অপেক্ষা করতে হবে। সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মো. আমান বলেন, আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ অনেকটাই বেড়েছে। তারপরও আমরা যাত্রীদের সুবিধামতো গাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করছি। ছুটি পুরোপুরি শুরু হলে এই চাপ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে অনেক যাত্রীই গাড়ি ছাড়তে বিলম্ব ও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেছেন। আব্দুল ওহাব নামে কুয়াকাটাগামী এক যাত্রী বলেন, এমনি সময়ে যেখানে ঢাকা থেকে সিট প্রতি বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা থাকে সেখানে এখন ৯০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের কিছু যাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, সাধারণ সময় থেকে দুইগুণ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। উপরন্তু আগাম টিকিট বুক দিয়ে রাখলেও কাউন্টারে এসে ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এলাকাটির গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিজান মজুমদার বলেন, ভোর থেকে একের পর এক গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু টিকিট বিক্রি করছি, গাড়ির হিসাব করার সময় পাচ্ছি না। তবে যাত্রীর ব্যাপক চাপ। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে একটা বাস যাত্রী নিয়ে যায় আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে। কিন্তু ঈদের সময়ে যাত্রী ভরে গেলেও ঢাকায় ঢোকার সময় খালি গাড়ি আসে। এরপর রাস্তায় খরচ আছে। সব মিলে ক্ষতি পোষাতে অন্য সময় থেকে ঈদের সময় ভাড়া একটু বেশি রাখে সকলে।

সরজমিন কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশনে এবার বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতে তিন স্তরে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টেশনের বাইরে, স্টেশন ভবনে প্রবেশের সময় এবং প্ল্যাটফরমে প্রবেশের আগে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে। যারা টিকিট সংগ্রহ করছেন না তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহের পর তাদের প্ল্যাটফরমে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ঈদের আগে যমুনা সেতুতে যে পরিমাণ গাড়ির জট হয়। এটি খুবই ভোগান্তির। ট্রেনে গেলে সড়ক পথের এই ভোগান্তির হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবছরই ট্রেনের টিকিট নিয়ে যেই নাটকীয়তা চলে তার ঠিক নেই। সারারাত দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাওয়া যায় না। এ বছর খুব সহজে অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করা গেছে। আশা করি তেমন কোনো ভোগান্তি হবে না।

টিকিট ছাড়া ঢুকতে না পারা ইমতিয়াজ নামে এক যাত্রী বলেন, অনলাইনে টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই টিকিট কাটতে পারিনি। টিকিট না কেটেই চলে আসছি। এসে দেখছি আগের মতো টিকিট ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছে না। পরে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিয়মের আলোকে বিনাটিকিটের যাত্রীরা কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফরমে ঢুকতে পারছে না। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো আছে। আশা করছি মানুষের ঈদযাত্রা ভালো হবে। যাত্রীরা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেন। অপরদিকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল, কলাবাগান, মালিবাগ, কল্যাণপুর, মিরপুর মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অবিস্থিত বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকেও মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। নদীপথে ঝামেলাহীন যাত্রা হওয়ায় চাঁদপুর, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ লঞ্চে করেও পাড়ি জমাচ্ছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মসজিদের ভেতরে ধর্মীয় নেতাকে হত্যা

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

আপডেট সময় ০১:৪৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ আবার গন্তব্যে ছুটছে নদীপথে  অনেকে আবার কাজের চাপে নিজে না গেলেও ঝক্কি কমাতে পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাড়িতে। গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাটসহ ঢাকা থেকে বের হওয়া সবক’টি স্টেশনে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ পড়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঈদের ছুটি শুরু না হলেও বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই ভিড় করছে মানুষ। তাদের বেশির ভাগেরই আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল বাসের টিকিট। অনেকে আবার কাউন্টারে এসেও কাটছেন টিকিট। একের পর এক বাস এসে দাঁড়াচ্ছে টার্মিনালের সামনে, আর যে যার গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। গাবতলী টার্মিনালের রয়েল এক্সপ্রেসের কাউন্টারের পেছনে বসে বাসের জন্য অপেক্ষারত আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসের ছুটি শুরু হবে বুধবার থেকে। অন্যান্য অফিসগুলোও একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় তখন অনেক যানজট হতে পারে। তাই আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর এজন্যই গাবতলীতে আসা।

তিনি বলেন, এবার অনেকদিন ছুটি পাচ্ছে মানুষ। তাই বেশির ভাগ মানুষই ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যাবে। এজন্য চাপটা একসঙ্গে পড়তে পারে। ভোগান্তি কমাতে আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছি। ঝিনাইদহগামী পূর্বাশা পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সকলেই অ্যাডভান্স টিকিট কেটে রেখেছেন। কিন্তু অ্যাডভান্স টিকিট কাটলে তার সময় পরিবর্তন বা বাতিল করার সুযোগ নেই। ভাবলাম ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার এখনো দুই-একদিন বাকি রয়েছে, রাস্তায় গাড়ির চাপ শুরুর আগেই বাড়ি জন্য রওনা করি। তাই সরাসরি টার্মিনালে চলে এসেছি। একটু কষ্ট হয়েছে তবে টিকিট পেয়েছি। এখন গাড়ির জন্য অপেক্ষা। মো. ফিরোজ নামে চুয়াডাঙ্গাগামী এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটি পরিবারের সঙ্গে পালন করতে ইতিমধ্যেই অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ আবার পরিবার-পরিজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে সবচেয়ে চাপ বাড়বে আগামী মঙ্গল-বুধবার। রয়েল এক্সপ্রেসের গাবতলী কাউন্টারের  বিক্রয়কর্মী মো. জিয়া বলেন, যাত্রীর পরিমাণ ভালোই, টিকিটও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

এখনো ছুটি শুরু হয়নি। পুরোপুরি ছুটি হলে যাত্রীর পরিমাণ আরও বাড়বে। টার্মিনালটির পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বশির আহমেদ বলেন, যাত্রী সংখ্যা ভালোই, তবে মঙ্গলবার রাত থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, এখন ঈদের সময়ে বেশির ভাগ যাত্রীই আগে থেকে তাদের টিকিট সংগ্রহ করে রাখেন। এরপর কাউন্টারের যাত্রীদের জন্য আমাদের কিছু টিকিটের ব্যবস্থা থাকে। তাই কাউন্টারে এসেও অনেকে টিকিট কাটছেন। যথাসময়ে আমাদের প্রতিটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের কাউন্টার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছুটি শুরু না হলেও ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই আগে আগে চলে যাচ্ছেন। আর ঈদে ঘরে ফেরা এসব মানুষের জন্য আমাদের টাইট শিডিউল চলছে। একটার পর একটা গাড়ি বুক হচ্ছে, টিকিট বিক্রি হচ্ছে, আর যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটছে গাড়ি। তিনি বলেন, অনান্য সময়ে যাওয়া-আসা দুই পথেই যাত্রী থাকে। কিন্তু ঈদের সময়ে যাত্রী ভরে বাস গাবতলী ছাড়লেও ঢাকায় আসে ফাঁকা গাড়ি। তাই অনান্য সময়ের চেয়ে একটু ভাড়া বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, নরাইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের ঢাকা ছাড়ার পছন্দের জায়গা সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী বাস কাউন্টারগুলো। এ ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, ছাতক, বিয়ানীবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন প্রান্তেও এখান থেকে বাস ছেড়ে যায়। রাতে-দিনে একের পর এক বাস যাত্রী নিয়ে সেখান থেকে ছুটে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। গতকাল সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে খুলনাগামী ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের অনেক ভিড়। কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল্লাহ বলেন, এখন যারা যাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই আগেই টিকিট নিয়েছিলেন। গাড়ির সব আসনেই যাত্রী। একের পর এক গাড়ি যাত্রী বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ, খুলনা ও পিরোজপুর চলাচলকারী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের কাউন্টারেও ছিল চোখে পড়ার মতো মানুষের উপস্থিতি।

১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। পরিবহনটির কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষারত আব্দুল আজিজ নামে খুলনাগামী এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটির আগে এমনিতেই কাজের অনেক চাপ থাকে। এরপর ঈদের কেনাকাটা। সবমিলে অগ্রিম টিকিট কাটতে পারিনি। তাই সরাসরি কাউন্টারে চলে এসেছি। কাউন্টার থেকে বলেছে- টিকিট হবে তবে অপেক্ষা করতে হবে। সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার মো. আমান বলেন, আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ অনেকটাই বেড়েছে। তারপরও আমরা যাত্রীদের সুবিধামতো গাড়ি ছাড়ার চেষ্টা করছি। ছুটি পুরোপুরি শুরু হলে এই চাপ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে অনেক যাত্রীই গাড়ি ছাড়তে বিলম্ব ও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেছেন। আব্দুল ওহাব নামে কুয়াকাটাগামী এক যাত্রী বলেন, এমনি সময়ে যেখানে ঢাকা থেকে সিট প্রতি বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা থাকে সেখানে এখন ৯০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের কিছু যাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, সাধারণ সময় থেকে দুইগুণ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। উপরন্তু আগাম টিকিট বুক দিয়ে রাখলেও কাউন্টারে এসে ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এলাকাটির গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিজান মজুমদার বলেন, ভোর থেকে একের পর এক গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু টিকিট বিক্রি করছি, গাড়ির হিসাব করার সময় পাচ্ছি না। তবে যাত্রীর ব্যাপক চাপ। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে একটা বাস যাত্রী নিয়ে যায় আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে। কিন্তু ঈদের সময়ে যাত্রী ভরে গেলেও ঢাকায় ঢোকার সময় খালি গাড়ি আসে। এরপর রাস্তায় খরচ আছে। সব মিলে ক্ষতি পোষাতে অন্য সময় থেকে ঈদের সময় ভাড়া একটু বেশি রাখে সকলে।

সরজমিন কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশনে এবার বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতে তিন স্তরে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টেশনের বাইরে, স্টেশন ভবনে প্রবেশের সময় এবং প্ল্যাটফরমে প্রবেশের আগে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে। যারা টিকিট সংগ্রহ করছেন না তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহের পর তাদের প্ল্যাটফরমে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ঈদের আগে যমুনা সেতুতে যে পরিমাণ গাড়ির জট হয়। এটি খুবই ভোগান্তির। ট্রেনে গেলে সড়ক পথের এই ভোগান্তির হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবছরই ট্রেনের টিকিট নিয়ে যেই নাটকীয়তা চলে তার ঠিক নেই। সারারাত দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাওয়া যায় না। এ বছর খুব সহজে অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করা গেছে। আশা করি তেমন কোনো ভোগান্তি হবে না।

টিকিট ছাড়া ঢুকতে না পারা ইমতিয়াজ নামে এক যাত্রী বলেন, অনলাইনে টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই টিকিট কাটতে পারিনি। টিকিট না কেটেই চলে আসছি। এসে দেখছি আগের মতো টিকিট ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছে না। পরে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিয়মের আলোকে বিনাটিকিটের যাত্রীরা কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফরমে ঢুকতে পারছে না। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো আছে। আশা করছি মানুষের ঈদযাত্রা ভালো হবে। যাত্রীরা নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেন। অপরদিকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল, কলাবাগান, মালিবাগ, কল্যাণপুর, মিরপুর মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অবিস্থিত বিভিন্ন বাস কাউন্টার থেকেও মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। নদীপথে ঝামেলাহীন যাত্রা হওয়ায় চাঁদপুর, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ লঞ্চে করেও পাড়ি জমাচ্ছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।