ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পল্লবীতে পাভেল হত্যা আরও তিনজন গ্রেপ্তার

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর পল্লবী থানাধীন স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় চাঞ্চল্যকর রিহান ইসলাম ওরফে পাভেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার  অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন  গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল টাঙ্গাইল, বরগুনা ও বরিশাল মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বুধবার তাদের  গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রায়হান বাবু (২৪), সোহেল তোতা মামা (২৪) ও বাচ্চু কাজল বাচ্চু (২৩)। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ।

মাদক সেবনের জন্য তাজমুল নামে আরেক সহযোগীর মাধ্যমে গত ১৪ই এপ্রিল বিকালে বাড্ডার পাঁচতালা বাজার এলাকার বাসা থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে করে পাভেলকে নেয়া হয় পল্লবীতে। পল্লবী থানাধীন ১২নং সেক্টরের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকার  টেকেরবাড়ী নামক স্থানে গণপূর্তের পুকুরের উত্তরপাড়ে মাদকও সেবন করেন পাভেল। এরমধ্যে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে বাসযোগে আসে মূল পরিকল্পনাকারী হাবিবসহ আরও কয়েকজন। সবাই একসঙ্গে পাভেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চাকু ও ছুরি দিয়ে পেট ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি স্টেপ করা হয়। এরপর তাকে গণপূর্তের পুকুরের পানিতে ফেলে সবাই পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের দেয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে পাভেলের মরদেহ উদ্ধারের পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পল্লবী থানা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাভেলের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। বাবার নাম শায়েস্তা খান। পাভেল থাকতেন বাড্ডার পাঁচতলা বাজার এলাকায়। পাভেল বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। মায়ের ভাষ্য মতে, ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতো পাভেল। গত ১৫ই এপ্রিল মা পারুল বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভুক্ত আসামি ৬ জন, তারা হলো- মো. হাবিব (২৮), মো. হানিফ (২৬), মো. আনিছ (২২), রায়হান নানু (২২), মো. মিলন (৩৭), ও মো. জনি (২৬)। বাকি আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী, পাভেলের পিঠে ছোট বড় ২২টি, মাথায় ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছে পুলিশ। আর মাথার পেছনে প্রায় তিন ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন, কোমড়ে চারটি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত দেখা গেছে। পাভেলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় মোট ৪৫টি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত-বিক্ষত আঘাত দেখেছে পুলিশ।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব শত্রুতা, চাঁদাবাজি ও মাদকের জের ধরে হত্যার শিকার পাভেল। ভুক্তভোগী ও মূল অভিযুক্ত বন্ধু হলেও তাদের মধ্যে শত্রুতা ছিল। তিনি বলেন, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গ্রুপিং নিয়ে পাভেল ও হাবিবের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সে সময় পাভেল হাবিবের হাতে কোপ দিয়েছিল। ওই ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৮শে ডিসেম্বর বাড্ডা থানায় মামলাও হয়। পাভেল জেল খাটলেও হাবিব শত্রুতা ভুলে যায়নি।

জেল থেকে বের হলেও হাবিব পাভেলকে উচিত শিক্ষা দেবার পরিকল্পনা করতে থাকে। তাজমুল  মোটরসাইকেলযোগে পাভেলকে পল্লবীতে নিয়ে যায়। হাবিবের দুই নিজের ভাই হানিফ ও আনিছসহ কয়েকজন মিলে পাভেলকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সরাসরি ছুরিকাঘাতে জড়িত তিনজনকে ডিবি মিরপুর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে ঘটনার সত্যতা ও জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় মূল পরিকল্পনাকারী হাবিব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাকি চারজনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসান জানান, পাভেল হত্যায় এখনো দু’জন পলাতক রয়েছে। পাভেল হত্যায় ব্যবহৃত আরটিআর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাভেলকে তুলে নিয়ে আসা তাজমুল ও হাবিবের আরেক ভাই হানিফ এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কেন নিষেধাজ্ঞা?

পল্লবীতে পাভেল হত্যা আরও তিনজন গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ০৮:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর পল্লবী থানাধীন স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় চাঞ্চল্যকর রিহান ইসলাম ওরফে পাভেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার  অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন  গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল টাঙ্গাইল, বরগুনা ও বরিশাল মহানগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বুধবার তাদের  গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রায়হান বাবু (২৪), সোহেল তোতা মামা (২৪) ও বাচ্চু কাজল বাচ্চু (২৩)। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ।

মাদক সেবনের জন্য তাজমুল নামে আরেক সহযোগীর মাধ্যমে গত ১৪ই এপ্রিল বিকালে বাড্ডার পাঁচতালা বাজার এলাকার বাসা থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে করে পাভেলকে নেয়া হয় পল্লবীতে। পল্লবী থানাধীন ১২নং সেক্টরের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকার  টেকেরবাড়ী নামক স্থানে গণপূর্তের পুকুরের উত্তরপাড়ে মাদকও সেবন করেন পাভেল। এরমধ্যে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে বাসযোগে আসে মূল পরিকল্পনাকারী হাবিবসহ আরও কয়েকজন। সবাই একসঙ্গে পাভেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চাকু ও ছুরি দিয়ে পেট ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি স্টেপ করা হয়। এরপর তাকে গণপূর্তের পুকুরের পানিতে ফেলে সবাই পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের দেয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে পাভেলের মরদেহ উদ্ধারের পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পল্লবী থানা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাভেলের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। বাবার নাম শায়েস্তা খান। পাভেল থাকতেন বাড্ডার পাঁচতলা বাজার এলাকায়। পাভেল বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। মায়ের ভাষ্য মতে, ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতো পাভেল। গত ১৫ই এপ্রিল মা পারুল বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভুক্ত আসামি ৬ জন, তারা হলো- মো. হাবিব (২৮), মো. হানিফ (২৬), মো. আনিছ (২২), রায়হান নানু (২২), মো. মিলন (৩৭), ও মো. জনি (২৬)। বাকি আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী, পাভেলের পিঠে ছোট বড় ২২টি, মাথায় ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছে পুলিশ। আর মাথার পেছনে প্রায় তিন ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন, কোমড়ে চারটি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত দেখা গেছে। পাভেলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় মোট ৪৫টি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত-বিক্ষত আঘাত দেখেছে পুলিশ।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব শত্রুতা, চাঁদাবাজি ও মাদকের জের ধরে হত্যার শিকার পাভেল। ভুক্তভোগী ও মূল অভিযুক্ত বন্ধু হলেও তাদের মধ্যে শত্রুতা ছিল। তিনি বলেন, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গ্রুপিং নিয়ে পাভেল ও হাবিবের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। সে সময় পাভেল হাবিবের হাতে কোপ দিয়েছিল। ওই ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৮শে ডিসেম্বর বাড্ডা থানায় মামলাও হয়। পাভেল জেল খাটলেও হাবিব শত্রুতা ভুলে যায়নি।

জেল থেকে বের হলেও হাবিব পাভেলকে উচিত শিক্ষা দেবার পরিকল্পনা করতে থাকে। তাজমুল  মোটরসাইকেলযোগে পাভেলকে পল্লবীতে নিয়ে যায়। হাবিবের দুই নিজের ভাই হানিফ ও আনিছসহ কয়েকজন মিলে পাভেলকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সরাসরি ছুরিকাঘাতে জড়িত তিনজনকে ডিবি মিরপুর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত মঙ্গলবার রাতে পল্লবী থানা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে ঘটনার সত্যতা ও জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় মূল পরিকল্পনাকারী হাবিব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাকি চারজনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসান জানান, পাভেল হত্যায় এখনো দু’জন পলাতক রয়েছে। পাভেল হত্যায় ব্যবহৃত আরটিআর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাভেলকে তুলে নিয়ে আসা তাজমুল ও হাবিবের আরেক ভাই হানিফ এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।