দ্রানীতির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, নীতির স্থিতিশীলতার অভাব আছে। মুদ্রানীতির যে ট্রাস্ট মিশন মেকানিজম, এটা বোধ হয় দুর্বল। রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা (জুুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪)’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ সমালোচনা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরনো কথাবার্তা এখনো চলছে, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। দেশের জাতীয় আয় ও রাজস্বের অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর ব্যবস্থার হারের গরমিলের কারণে করদাতাকে অনেক সময় নির্ধারিত করের চেয়ে বেশি কর প্রদান করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণে আরও বেশি জোর দেয়া উচিত। তবে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে প্রাপ্তিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে।
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতির স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রপ্তানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে কারও কোনো দ্বিমত নেই, তবে নতুন পণ্য এবং নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে নানামুখী চাপও রয়েছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জুুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ট্রিলিয়ন ডলারের স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে হলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, ব্যবসা পরিচালনা সূচকে উন্নয়ন, টেকসই নীতি সংস্কার, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে এবং বিদ্যমান অবস্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাব ২ বিলিয়ন ডলার বেশি। তিনি জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে সমন্বয় আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, ফলে এক্ষেত্রে স্বস্তি আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মুল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমুখী নীতি অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে শিল্পখাতে খেলাপি ঋণ ৮% নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ গ্রহণ করেছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, সবাই টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেয়ার অভিযোগ করেন কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। টাকা ছাপানো বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়মিত কাজ। টাকা ছাপানো মানেই সরকারকে দেয়া নয়। বাস্তবতা হলো গেল ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি টাকাও অর্থনীতিতে ইনজেক্ট করেনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে সেখানে সময়মতো পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইনোভেশনের উপর অধিক হারে মনোনিবেশ করার উপর তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের কর জিডিপি’র অনুপাত ১০%, যেটা বাড়াতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি জানান, খেলাপি ঋণ দেশের বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।