ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী

হাতেখড়ির বিদ্যালয়

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন সকদি রামপুর গ্রাম। পাখি-ডাকা, মধুমাখা, ছায়াঘেরা, সবুজে আচ্ছাদিত সুনিবিড়, শান্তির নীড়, অনিন্দ্য সুন্দর এ গ্রামটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নিপুণ শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মতোই অনন্য, জীবন্ত গ্রাম। দুই দিকে দুই হাত মেলে প্রবাহিত সর্পিল ডাকাতিয়া নদী, তীরদেশে শৌর্য-বীর্য-ঐতিহ্যের বারতা ঘোষণাকারী সুউচ্চ লোহাগড়ের মঠ, সমৃদ্ধ চান্দ্রা বাজার, বুক চিরে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পায়ে চলা মেঠো পথ, মাঠের পর মাঠ, হৃদয়কাড়া সবুজের সমারোহ। রূপসী বাংলার চির সবুজ রূপের বাহার ছড়িয়ে আছে আপনমনে। এইতো আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, মাতৃভূমি। কী সুন্দর নাম- সকদি রামপুর। এ পবিত্র ভূমিতে কেটেছে উড়ন্ত, দূরন্ত, বাঁধনহারা শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য। আজ কতো কথা, কতো স্মৃতি মনে পড়ে হৃদয়ের মনিকোঠায়।

মনে পড়ে যায় শৈশবের পড়ার ও খেলার সাথীদের কথা। এসব হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে এখনো সমুজ্জ্বল আমাদের প্রিয় হাতেখড়ির পাঠশালা, সকদি রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। বলিয়াপুর, বেহারিপুর, সকদি রামপুর-তিন পুরের আলোকবর্তিকা, ধ্রুবতারা।

একটি কর্মমুখি, সুদক্ষ, সুনাগরিক, সুশৃঙ্খল জাতি গঠনের লক্ষ্যে অসাধারণ নেতৃত্ব শৈলী, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, উন্নয়নের যাদুকর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামগ্রিক চিত্র পাল্টিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পাল্টে গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারাও। সারাদেশে একই নকশায় নির্মিত ১৩,০০০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের অজপাড়াগাঁয়ের বিদ্যালয়টিও আধুনিক স্থাপত্য রীতি দেখে মানুষ বিমুগ্ধ-বিমোহিত। নবরূপে উদ্ভাসিত একে হঠাৎ দেখে মানুষ তাজ্জব হয়ে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। এও সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। তাহলে শুনুন পিছনের কথা।

সেই পাকিস্তানি আমলে সত্তর দশকে ফেলে আসা কৈশোরে স্কুলটির আদিরূপে জৌলুশ, লাবণ্য, আকর্ষণ কিছুই ছিল না। কেবল নামকাওয়াস্তে এল টাইপের একতলার একটি দালান। হাটি হাটি পা পা করে যৌবন উত্তীর্ণ হয়ে বার্ধক্যের কোঠায় অবতীর্ণ। স্কুলটি চারিদিক আলোকিত করার দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে জন্ম নিয়েছিল ১৯৩৯ সনে, প্রায় ৮৪ বছর আগে।

আমাদের সময়ে স্কুলটি ছিল একবারে হতশ্রী। ভাঙ্গা বেড়া, ইট-সুড়কির আধা-ভাঙ্গা দালান, মাঝে বেড়া না থাকায় মনে হতো লম্বা একটা কক্ষ, এবড়ো-থেবড়ো খেলার মাঠ, অরক্ষিত এবং উন্মুক্ত খেলার মাঠ। এর একাংশ দখলে থাকতো গরু-ছাগল আর ফসলাদির। প্রাথমিক শিক্ষার সূতিকাগার হলেও পাকিস্তানীদের অবহেলা, বঞ্চনার শিকারের এমন জ্বলন্ত উদাহরণ ছিল সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

বর্ষাকালে ভিতর-বাহিরে সমানতালে বৃষ্টি। শত ছিদ্রযুক্ত মাথার ছাঁদ। এক পর্যায়ে বৃষ্টি থেমে যেতো। কিন্তু ভিতরে বৃষ্টি। ছাঁদের পানি ছুঁইয়ে পড়ে রীতিমতো গোসল। পল্লী কবির আসমানীর ঘরের মতোই ভগ্নদশা।

“বাড়িতো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি। ”

সেকালে কাঠ, টিন বা বিশেষভাবে মাটির তৈরি স্লেট-পেন্সিল দিয়ে হাতেখড়ি হতো। থুথু বা পানি দিয়ে লেখা মুছে ফেলা যেতো। তাই শতবার ব্যবহার করলেও গরীব বাবা-মায়ের অতিরিক্ত খরচ করতে হতো না। বৃষ্টির পানি থেকে বই-পুস্তক রক্ষাকল্পে এগুলোর দ্বিবিধ ব্যবহার হতো। বেশি বৃষ্টি হলে সমস্বরে কোরাস গাইতাম-

“স্যার বিজ্জা গেছি, একবারে গোসল কইরা হালাইছি, ছুটি দেন।” অসহায় শিক্ষকগণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতেন। দৈন্যদশা হতো তাঁদের কক্ষেও, আধা-হাটু কৃত্রিম পুকুর। অগত্যা বেল বেজে উঠতো-ঠনঠন ঠনঠন। আর যায় কোথায়? পরম কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। মাথায় লুঙ্গি তোলে বাড়ির দিকে ভোঁ দৌড়! কে কার দিকে তাকায়, সময় কোথায়? কে হবে ফাস্ট-সেটাই ছিল মূল লক্ষ্য।

বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম এবং সিম পাতা ঘষে কালি তৈরি করতে হতো। ঝরনা ও মুকুল কালি এবং মাতৃ রাইটার কলমের ভাগ্য জুটেছে অনেক পরে। মলিন-ছেঁড়া জামা-কাপড়, ছেঁড়া বই, খালি পা, অনেকের আবার খালি পেট-এই ছিল গ্রাম বাংলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অতি সাধারণ চিত্র।

দক্ষিণ দিকে খেলার মাঠ। মাঠতো নয়, যেন এবড়োখেবড়ো ফসলের ক্ষেত। সর্ব দক্ষিণে ছায়াঘেরা, মৌ মৌ গন্ধে আপ্লূত মন্ডল গাছ। এর নীচে ডাক পড়া। একজন বলতো, ১-অন্যরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে পড়তো-১৷ ২-২, ৩-৩ ইত্যাদি ডাকপড়া এবং এক দশ এক ১১-শতাকিয়া। কার গলায় কতো জোর চলতো প্রতিযোগিতা। কানফাটা আওয়াজের মাঝে ডানে-বামে তাকিয়ে উসাইন বোল্টের দৌড়! স্কুল পালানোর অভিজ্ঞতা যাদের নেই তারা পোড়া কপাইল্যা। এর যে কী মজা আর আনন্দ তা বুঝাই কেমন করে? শিয়ালে খাওয়া হারাধনের দশটি ছাগল ছানার মতো এক এক করে সব শেষ। কে কাকে পড়াবে? বাগানে বা আড়ালে সাময়িক লুকিয়ে থেকে বেলের বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সঙ্গে মিশে বাড়িতে গমন। আহা! সাধু সাধু, কতো সুশৃঙ্খল শিক্ষার্থী!

পাকিস্তান এবং বর্তমান কালেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের মূল ভরসা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেতন নাই, ফ্রি। তাই দুই চার ক্লাস পড়ে ‘শিক্ষিত’ সাজা। অনেকের নতুন বই কেনার সাধ্য ছিল না। তাই ইস্তফা, পড়াশোনা শিকেয় উঠে। কারও বড় ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনের পুরনো বই ফেলে এবার রক্ষা। নচেৎ পুরনো বই কিনে কোন রকমে চালিয়ে যাওয়া। হাইস্কুল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল এমনি ধারা ।

শত প্রতিকূলতা। কিন্তু শিক্ষকগণ ছিলেন আদর্শস্হানীয়, অনুকরণীয়। ছাত্র-ছাত্রীকে প্রকৃত মানুষ করার জন্য ত্যাগ, স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে, হৃদয় উজাড় করে দিতেন। তাঁদের কয় টাকা মাইনে? পারিবারিক জীবনের অপ্রাপ্তি, অশান্তি, দুঃখ-কষ্ট ঘুর্ণাক্ষরেও প্রকাশ পেতো না। উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। বুঝার কোন উপায় নাই। একটু দূরে বসতবাড়ি হলে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুব্যবস্হা-লজিং। প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক এবং হাইস্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিয়েছিল বিপুল জনপ্রিয় লজিং সিস্টেম। কোচিং বানিজ্য, প্রাইভেট পড়ানো এসব শব্দও সাধারন্যে প্রচলিত ছিল না।

স্কুলের মাঠ খুব কম সময়ই ছোটদের ভাগ্যে জুটতো। বল কুড়ানো, বা একটু সুযোগের জন্য তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকা। বিকেল ছিল যুবকদের বিভিন্ন ধরনের খেলার একচেটিয়া রাজত্ব। বর্ষাকালে কাঁদায় একহাঁটু হতো। কাঁদায় মিশে চেহারা মোবারক চেনার উপায় থাকতো না। বার্ষিক পরীক্ষার পরে শীতকালে হতো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। যত মনোকষ্টের বিষয় হতো মধ্যম উচ্চতার ছেলেমেয়েদের। লম্বায় কম। তাই সিনিয়রদের সঙ্গে পড়লে ফলাফল-গোল্লা। আবার জুনিয়র গ্রুপ হতে বাদ। কেবল আফসোস মাত্র।

চতুর্থ শ্রেণিতে দশটি অংকের স্হলে ভুলে এগারোটি লিখেছিলাম। ১০০-এর মধ্যে ১১০ দিলেন স্যার। সব দোষ নন্দ ঘোষের। আর যায় কোথায়? ছাৎ ছাৎ বেতের বাড়ি। মনে হয় এখনও পিঠে দাগ আছে। ১৯৭১ সন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম সময়। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিপাগল সমগ্র জাতি। অবশেষে দেশ হলো স্বাধীন। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার পরম পূরণ, ফি জমাদান ইত্যাদি বিষয়ে কিছুই জানতাম না। কিন্তু মহান শিক্ষাগুরু, প্রধান শিক্ষক, শ্রদ্ধেয় জয়নাল আবেদীন স্যার ঠিকই যথাসময়ে সব সম্পন্ন করে রেখেছেন। ফরিদগঞ্জে আগে জীবনেও যাইনি। দিলাম বৃত্তি পরীক্ষা। সাইজে ছোট। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোন রকমে লিখলাম। আলহামদুলিল্লাহ, বৃত্তিও পেলাম। সেই যে সরকারি বৃত্তি লাভের শুরু, একনাগাড়ে শেষ হলো এম এ পর্যন্ত এসে।

সেদিন প্রাণের টানে গেলাম আমাদের স্কুলে। শৈশবের ভাঙ্গাচুরা স্মৃতিময় স্কুল বহু আগেই যাদুঘরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপহার দেন স্বাধীন দেশ। সঙ্গে সঙ্গে একটি আধুনিক, শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য ২৬,০০০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, অবৈতনিক শিক্ষায় রুপান্তর করেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের জোয়ারের অংশ-প্রাইমারি স্কুলের দিকে তাকালে মনে হয় আমরা পূর্ব-এশিয়া, ইউরোপ বা আমেরিকায় আছি। এ এক অবিশ্বাস্য রূপকথা, তাক লাগানো বাস্তবতা! চোখ জুড়ে যায়। কী সুন্দর সুউচ্চ অট্টালিকা, অসাধারণ সুন্দর! শিক্ষার্থীরা পরিপাটি, ড্রেস পরা, সুন্দর সুন্দর সু পরা, পিঠে স্কুল ব্যাগ, টিফিন ক্যারিয়ার, পানির বোতল। কী নাই!

ভেতরের দেয়ালে শত-শত বছরের বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, সংগ্রাম, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শৈর্য-বীর্য একবারেই জীবন্ত। পাঠ্য বইয়ের বিষয়গুলোর সঙ্গে এসব সচিত্র প্রতিবেদন ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়ায় উপস্থাপনার ফলে বাড়িতে আর পড়ার দরকার হয় না। শিক্ষা এখন আর ভীতি নয়, আনন্দদায়ক, বিনোদনমূলক।

বিদ্যালয়গুলোর চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল। কতো রকমের খেলার সামগ্রী! মনে হয় বিদ্যালয়গুলো শিশুপার্ক। শিশুদের মনে কি উচ্ছ্বাস, আনন্দ! “এইখানে মিথ্যে কথা কেউ বলে না/ এইখানে অসৎ পথে কেউ চলে না/পড়ার সময় লেখাপড়া/কাজের সময় কাজ করা। খেলার সময় খেলা করি/আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী।” সরকার আবার উপবৃত্তি দিচ্ছে, বছরের প্রথম দিন নতুন নতুন বই। আর কি চাই। সরকারের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।” প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ, দেশগড়ার কারিগর সৃজন।

“এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে

এই দিনেরে নিবে তুমরা সেই দিনেরে কাছে।” সেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের স্কুলও সমানতালে এগিয়ে যাক-এটাই সর্বজনীন প্রত্যাশা। এজন্য কিছু টিপস উল্লেখ করা যায়-দাঁত মাজা, নখ-চুল ছোট করা, টয়লেট ব্যবহারের পদ্ধতি শেখানো, নামাজ-মক্তবে গমন, ধর্মীয় শিক্ষা সঠিকভাবে গ্রহন, ভালো শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা, গরীব-মেধাবীদের প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেয়া, শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা, হাতের লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা, খাতা চেক করে শুদ্ধ বানান, হস্তাক্ষর সুন্দর করা, ঘুরে ফিরে সকল শিক্ষার্থীর পড়া নেয়া, বোর্ডে নিয়ে দুই-এক লাইন লেখানো, জোরে রিডিং পড়ানো, দেয়ালের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা, প্রতিটি বিষয়ে দুই-চার লাইন বলতে ও লিখতে উৎসাহ দেয়া, ভালো কাজের প্রশংসা করা, খারাপ কিছু করলে না ধমকিয়ে সংশোধনের পরামর্শ দেয়া, পিতা-মাতা, বড়োজেষ্ঠ্যদের সম্মান করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ও শ্রদ্ধা সৃষ্টি করা, নিজের কাজ নিজে করা, বাড়িতে ঘর, পড়ার টেবিল, বই-পুস্তক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা, স্কুলে ও বাড়িতে ফুলের বাগান করা-যত্ন নেয়া, পরিষ্কার হয়ে চলা, সত্য কথা বলা, ভুলেও মিথ্যা কথা না বলা, বড়োদের কাজে সাহায্য করা, ক্লাস রুম, মাঠ নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা, সময় মতো অবশ্যই খেলাধুলা করা, নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি করা, সুরা-কেরাত-গজল বলা, শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, স্কাউটিং-কাব করা, কম্পিউটার শেখা ও বিশেষভাবে উদ্ধুদ্ধ করা, রাষ্ট্রীয় দিবস পালন করা, এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা, প্রতিদিন ৪/৫ টি বাংলা বা ইংরেজি শব্দ শেখা, সরকারের সকল নির্দেশনা প্রতিপালন করা ইত্যাদি। অধিকন্তু অভিভাবক ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে মতবিনিময় করা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী/ বিশিষ্টজনদের স্কুল পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানানো, প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতে উৎসাহ দেয়া- বাহবা দিয়ে, হাততালি দিয়ে, ছোট চিঠি লিখে উৎসাহ প্রদানের কাজগুলো সম্মানিত শিক্ষকগণ সহজেই করতে পারেন।

আমাদের বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী সত্যি অসাধারণ, অনন্য। তেমনি অসাধারণ, অনন্য, ভদ্র, বিনয়ী, সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষিত আমাদের সম্মানিত এলাকাবাসী। এটি অনেক বড় গৌরবের ও গর্বের বিষয়। এমন মণিকাঞ্চন যোগ সচরাচর হয় না। সময় এখন আমাদের সকলের। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, জড়তা কাটিয়ে জেগে উঠবো সময়ের সেরা ও সাহসী মানুষ হিসেবে। আমরা আশাবাদী যে, সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রানপ্রিয় বিদ্যালয়টি অচিরেই পরিনত হবে দেশসেরা বিদ্যালয়ে। (ফেসবুক থেকে নেয়া)

মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী

সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন

সাবেক সিনিয়র সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী

হাতেখড়ির বিদ্যালয়

আপডেট সময় ০১:০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন সকদি রামপুর গ্রাম। পাখি-ডাকা, মধুমাখা, ছায়াঘেরা, সবুজে আচ্ছাদিত সুনিবিড়, শান্তির নীড়, অনিন্দ্য সুন্দর এ গ্রামটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নিপুণ শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মতোই অনন্য, জীবন্ত গ্রাম। দুই দিকে দুই হাত মেলে প্রবাহিত সর্পিল ডাকাতিয়া নদী, তীরদেশে শৌর্য-বীর্য-ঐতিহ্যের বারতা ঘোষণাকারী সুউচ্চ লোহাগড়ের মঠ, সমৃদ্ধ চান্দ্রা বাজার, বুক চিরে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পায়ে চলা মেঠো পথ, মাঠের পর মাঠ, হৃদয়কাড়া সবুজের সমারোহ। রূপসী বাংলার চির সবুজ রূপের বাহার ছড়িয়ে আছে আপনমনে। এইতো আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, মাতৃভূমি। কী সুন্দর নাম- সকদি রামপুর। এ পবিত্র ভূমিতে কেটেছে উড়ন্ত, দূরন্ত, বাঁধনহারা শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য। আজ কতো কথা, কতো স্মৃতি মনে পড়ে হৃদয়ের মনিকোঠায়।

মনে পড়ে যায় শৈশবের পড়ার ও খেলার সাথীদের কথা। এসব হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে এখনো সমুজ্জ্বল আমাদের প্রিয় হাতেখড়ির পাঠশালা, সকদি রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। বলিয়াপুর, বেহারিপুর, সকদি রামপুর-তিন পুরের আলোকবর্তিকা, ধ্রুবতারা।

একটি কর্মমুখি, সুদক্ষ, সুনাগরিক, সুশৃঙ্খল জাতি গঠনের লক্ষ্যে অসাধারণ নেতৃত্ব শৈলী, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, উন্নয়নের যাদুকর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামগ্রিক চিত্র পাল্টিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পাল্টে গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেহারাও। সারাদেশে একই নকশায় নির্মিত ১৩,০০০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের অজপাড়াগাঁয়ের বিদ্যালয়টিও আধুনিক স্থাপত্য রীতি দেখে মানুষ বিমুগ্ধ-বিমোহিত। নবরূপে উদ্ভাসিত একে হঠাৎ দেখে মানুষ তাজ্জব হয়ে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। এও সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। তাহলে শুনুন পিছনের কথা।

সেই পাকিস্তানি আমলে সত্তর দশকে ফেলে আসা কৈশোরে স্কুলটির আদিরূপে জৌলুশ, লাবণ্য, আকর্ষণ কিছুই ছিল না। কেবল নামকাওয়াস্তে এল টাইপের একতলার একটি দালান। হাটি হাটি পা পা করে যৌবন উত্তীর্ণ হয়ে বার্ধক্যের কোঠায় অবতীর্ণ। স্কুলটি চারিদিক আলোকিত করার দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে জন্ম নিয়েছিল ১৯৩৯ সনে, প্রায় ৮৪ বছর আগে।

আমাদের সময়ে স্কুলটি ছিল একবারে হতশ্রী। ভাঙ্গা বেড়া, ইট-সুড়কির আধা-ভাঙ্গা দালান, মাঝে বেড়া না থাকায় মনে হতো লম্বা একটা কক্ষ, এবড়ো-থেবড়ো খেলার মাঠ, অরক্ষিত এবং উন্মুক্ত খেলার মাঠ। এর একাংশ দখলে থাকতো গরু-ছাগল আর ফসলাদির। প্রাথমিক শিক্ষার সূতিকাগার হলেও পাকিস্তানীদের অবহেলা, বঞ্চনার শিকারের এমন জ্বলন্ত উদাহরণ ছিল সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

বর্ষাকালে ভিতর-বাহিরে সমানতালে বৃষ্টি। শত ছিদ্রযুক্ত মাথার ছাঁদ। এক পর্যায়ে বৃষ্টি থেমে যেতো। কিন্তু ভিতরে বৃষ্টি। ছাঁদের পানি ছুঁইয়ে পড়ে রীতিমতো গোসল। পল্লী কবির আসমানীর ঘরের মতোই ভগ্নদশা।

“বাড়িতো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি। ”

সেকালে কাঠ, টিন বা বিশেষভাবে মাটির তৈরি স্লেট-পেন্সিল দিয়ে হাতেখড়ি হতো। থুথু বা পানি দিয়ে লেখা মুছে ফেলা যেতো। তাই শতবার ব্যবহার করলেও গরীব বাবা-মায়ের অতিরিক্ত খরচ করতে হতো না। বৃষ্টির পানি থেকে বই-পুস্তক রক্ষাকল্পে এগুলোর দ্বিবিধ ব্যবহার হতো। বেশি বৃষ্টি হলে সমস্বরে কোরাস গাইতাম-

“স্যার বিজ্জা গেছি, একবারে গোসল কইরা হালাইছি, ছুটি দেন।” অসহায় শিক্ষকগণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতেন। দৈন্যদশা হতো তাঁদের কক্ষেও, আধা-হাটু কৃত্রিম পুকুর। অগত্যা বেল বেজে উঠতো-ঠনঠন ঠনঠন। আর যায় কোথায়? পরম কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। মাথায় লুঙ্গি তোলে বাড়ির দিকে ভোঁ দৌড়! কে কার দিকে তাকায়, সময় কোথায়? কে হবে ফাস্ট-সেটাই ছিল মূল লক্ষ্য।

বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম এবং সিম পাতা ঘষে কালি তৈরি করতে হতো। ঝরনা ও মুকুল কালি এবং মাতৃ রাইটার কলমের ভাগ্য জুটেছে অনেক পরে। মলিন-ছেঁড়া জামা-কাপড়, ছেঁড়া বই, খালি পা, অনেকের আবার খালি পেট-এই ছিল গ্রাম বাংলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অতি সাধারণ চিত্র।

দক্ষিণ দিকে খেলার মাঠ। মাঠতো নয়, যেন এবড়োখেবড়ো ফসলের ক্ষেত। সর্ব দক্ষিণে ছায়াঘেরা, মৌ মৌ গন্ধে আপ্লূত মন্ডল গাছ। এর নীচে ডাক পড়া। একজন বলতো, ১-অন্যরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে পড়তো-১৷ ২-২, ৩-৩ ইত্যাদি ডাকপড়া এবং এক দশ এক ১১-শতাকিয়া। কার গলায় কতো জোর চলতো প্রতিযোগিতা। কানফাটা আওয়াজের মাঝে ডানে-বামে তাকিয়ে উসাইন বোল্টের দৌড়! স্কুল পালানোর অভিজ্ঞতা যাদের নেই তারা পোড়া কপাইল্যা। এর যে কী মজা আর আনন্দ তা বুঝাই কেমন করে? শিয়ালে খাওয়া হারাধনের দশটি ছাগল ছানার মতো এক এক করে সব শেষ। কে কাকে পড়াবে? বাগানে বা আড়ালে সাময়িক লুকিয়ে থেকে বেলের বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সঙ্গে মিশে বাড়িতে গমন। আহা! সাধু সাধু, কতো সুশৃঙ্খল শিক্ষার্থী!

পাকিস্তান এবং বর্তমান কালেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের মূল ভরসা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেতন নাই, ফ্রি। তাই দুই চার ক্লাস পড়ে ‘শিক্ষিত’ সাজা। অনেকের নতুন বই কেনার সাধ্য ছিল না। তাই ইস্তফা, পড়াশোনা শিকেয় উঠে। কারও বড় ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনের পুরনো বই ফেলে এবার রক্ষা। নচেৎ পুরনো বই কিনে কোন রকমে চালিয়ে যাওয়া। হাইস্কুল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল এমনি ধারা ।

শত প্রতিকূলতা। কিন্তু শিক্ষকগণ ছিলেন আদর্শস্হানীয়, অনুকরণীয়। ছাত্র-ছাত্রীকে প্রকৃত মানুষ করার জন্য ত্যাগ, স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে, হৃদয় উজাড় করে দিতেন। তাঁদের কয় টাকা মাইনে? পারিবারিক জীবনের অপ্রাপ্তি, অশান্তি, দুঃখ-কষ্ট ঘুর্ণাক্ষরেও প্রকাশ পেতো না। উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। বুঝার কোন উপায় নাই। একটু দূরে বসতবাড়ি হলে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুব্যবস্হা-লজিং। প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক এবং হাইস্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিয়েছিল বিপুল জনপ্রিয় লজিং সিস্টেম। কোচিং বানিজ্য, প্রাইভেট পড়ানো এসব শব্দও সাধারন্যে প্রচলিত ছিল না।

স্কুলের মাঠ খুব কম সময়ই ছোটদের ভাগ্যে জুটতো। বল কুড়ানো, বা একটু সুযোগের জন্য তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকা। বিকেল ছিল যুবকদের বিভিন্ন ধরনের খেলার একচেটিয়া রাজত্ব। বর্ষাকালে কাঁদায় একহাঁটু হতো। কাঁদায় মিশে চেহারা মোবারক চেনার উপায় থাকতো না। বার্ষিক পরীক্ষার পরে শীতকালে হতো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। যত মনোকষ্টের বিষয় হতো মধ্যম উচ্চতার ছেলেমেয়েদের। লম্বায় কম। তাই সিনিয়রদের সঙ্গে পড়লে ফলাফল-গোল্লা। আবার জুনিয়র গ্রুপ হতে বাদ। কেবল আফসোস মাত্র।

চতুর্থ শ্রেণিতে দশটি অংকের স্হলে ভুলে এগারোটি লিখেছিলাম। ১০০-এর মধ্যে ১১০ দিলেন স্যার। সব দোষ নন্দ ঘোষের। আর যায় কোথায়? ছাৎ ছাৎ বেতের বাড়ি। মনে হয় এখনও পিঠে দাগ আছে। ১৯৭১ সন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম সময়। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিপাগল সমগ্র জাতি। অবশেষে দেশ হলো স্বাধীন। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার পরম পূরণ, ফি জমাদান ইত্যাদি বিষয়ে কিছুই জানতাম না। কিন্তু মহান শিক্ষাগুরু, প্রধান শিক্ষক, শ্রদ্ধেয় জয়নাল আবেদীন স্যার ঠিকই যথাসময়ে সব সম্পন্ন করে রেখেছেন। ফরিদগঞ্জে আগে জীবনেও যাইনি। দিলাম বৃত্তি পরীক্ষা। সাইজে ছোট। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোন রকমে লিখলাম। আলহামদুলিল্লাহ, বৃত্তিও পেলাম। সেই যে সরকারি বৃত্তি লাভের শুরু, একনাগাড়ে শেষ হলো এম এ পর্যন্ত এসে।

সেদিন প্রাণের টানে গেলাম আমাদের স্কুলে। শৈশবের ভাঙ্গাচুরা স্মৃতিময় স্কুল বহু আগেই যাদুঘরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপহার দেন স্বাধীন দেশ। সঙ্গে সঙ্গে একটি আধুনিক, শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য ২৬,০০০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, অবৈতনিক শিক্ষায় রুপান্তর করেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের জোয়ারের অংশ-প্রাইমারি স্কুলের দিকে তাকালে মনে হয় আমরা পূর্ব-এশিয়া, ইউরোপ বা আমেরিকায় আছি। এ এক অবিশ্বাস্য রূপকথা, তাক লাগানো বাস্তবতা! চোখ জুড়ে যায়। কী সুন্দর সুউচ্চ অট্টালিকা, অসাধারণ সুন্দর! শিক্ষার্থীরা পরিপাটি, ড্রেস পরা, সুন্দর সুন্দর সু পরা, পিঠে স্কুল ব্যাগ, টিফিন ক্যারিয়ার, পানির বোতল। কী নাই!

ভেতরের দেয়ালে শত-শত বছরের বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, সংগ্রাম, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শৈর্য-বীর্য একবারেই জীবন্ত। পাঠ্য বইয়ের বিষয়গুলোর সঙ্গে এসব সচিত্র প্রতিবেদন ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়ায় উপস্থাপনার ফলে বাড়িতে আর পড়ার দরকার হয় না। শিক্ষা এখন আর ভীতি নয়, আনন্দদায়ক, বিনোদনমূলক।

বিদ্যালয়গুলোর চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল। কতো রকমের খেলার সামগ্রী! মনে হয় বিদ্যালয়গুলো শিশুপার্ক। শিশুদের মনে কি উচ্ছ্বাস, আনন্দ! “এইখানে মিথ্যে কথা কেউ বলে না/ এইখানে অসৎ পথে কেউ চলে না/পড়ার সময় লেখাপড়া/কাজের সময় কাজ করা। খেলার সময় খেলা করি/আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী।” সরকার আবার উপবৃত্তি দিচ্ছে, বছরের প্রথম দিন নতুন নতুন বই। আর কি চাই। সরকারের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।” প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ, দেশগড়ার কারিগর সৃজন।

“এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে

এই দিনেরে নিবে তুমরা সেই দিনেরে কাছে।” সেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের স্কুলও সমানতালে এগিয়ে যাক-এটাই সর্বজনীন প্রত্যাশা। এজন্য কিছু টিপস উল্লেখ করা যায়-দাঁত মাজা, নখ-চুল ছোট করা, টয়লেট ব্যবহারের পদ্ধতি শেখানো, নামাজ-মক্তবে গমন, ধর্মীয় শিক্ষা সঠিকভাবে গ্রহন, ভালো শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা, গরীব-মেধাবীদের প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেয়া, শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করা, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা, হাতের লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা, খাতা চেক করে শুদ্ধ বানান, হস্তাক্ষর সুন্দর করা, ঘুরে ফিরে সকল শিক্ষার্থীর পড়া নেয়া, বোর্ডে নিয়ে দুই-এক লাইন লেখানো, জোরে রিডিং পড়ানো, দেয়ালের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা, প্রতিটি বিষয়ে দুই-চার লাইন বলতে ও লিখতে উৎসাহ দেয়া, ভালো কাজের প্রশংসা করা, খারাপ কিছু করলে না ধমকিয়ে সংশোধনের পরামর্শ দেয়া, পিতা-মাতা, বড়োজেষ্ঠ্যদের সম্মান করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ও শ্রদ্ধা সৃষ্টি করা, নিজের কাজ নিজে করা, বাড়িতে ঘর, পড়ার টেবিল, বই-পুস্তক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা, স্কুলে ও বাড়িতে ফুলের বাগান করা-যত্ন নেয়া, পরিষ্কার হয়ে চলা, সত্য কথা বলা, ভুলেও মিথ্যা কথা না বলা, বড়োদের কাজে সাহায্য করা, ক্লাস রুম, মাঠ নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা, সময় মতো অবশ্যই খেলাধুলা করা, নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি করা, সুরা-কেরাত-গজল বলা, শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, স্কাউটিং-কাব করা, কম্পিউটার শেখা ও বিশেষভাবে উদ্ধুদ্ধ করা, রাষ্ট্রীয় দিবস পালন করা, এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা, প্রতিদিন ৪/৫ টি বাংলা বা ইংরেজি শব্দ শেখা, সরকারের সকল নির্দেশনা প্রতিপালন করা ইত্যাদি। অধিকন্তু অভিভাবক ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে মতবিনিময় করা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী/ বিশিষ্টজনদের স্কুল পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানানো, প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করতে উৎসাহ দেয়া- বাহবা দিয়ে, হাততালি দিয়ে, ছোট চিঠি লিখে উৎসাহ প্রদানের কাজগুলো সম্মানিত শিক্ষকগণ সহজেই করতে পারেন।

আমাদের বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী সত্যি অসাধারণ, অনন্য। তেমনি অসাধারণ, অনন্য, ভদ্র, বিনয়ী, সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষিত আমাদের সম্মানিত এলাকাবাসী। এটি অনেক বড় গৌরবের ও গর্বের বিষয়। এমন মণিকাঞ্চন যোগ সচরাচর হয় না। সময় এখন আমাদের সকলের। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, জড়তা কাটিয়ে জেগে উঠবো সময়ের সেরা ও সাহসী মানুষ হিসেবে। আমরা আশাবাদী যে, সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রানপ্রিয় বিদ্যালয়টি অচিরেই পরিনত হবে দেশসেরা বিদ্যালয়ে। (ফেসবুক থেকে নেয়া)

মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী

সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন

সাবেক সিনিয়র সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়