ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

তালা ভেঙে কার্যালয়ে বিএনপি নেতারা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ ৭৪ দিন পর তালা ভেঙে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে যান বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলটির শতাধিক নেতাকর্মী। এসময় হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙেন তারা। এরপর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।  ভেতরে প্রবেশের পর দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পুরো কার্যালয়ে ধুলোবালির স্তূপ জমে আছে। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল, কাজগপত্র, পত্রিকা।

কার্যালয়ে প্রবেশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। বলেন, ২৮শে অক্টোবরের তাণ্ডবের পর আপনাদের চোখের সামনে তালা লাগিয়ে পুলিশ চাবি নিয়ে যায়। এরপর কতো নাটক ওরা করেছে। আমরা পুলিশের কাছে চাবি চেয়েছিলাম। সেটা তারা দেয়নি।

তিনি বলেন, দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যকর রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দল বারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে। সেই দলের প্রধান কার্যালয় একটি মাফিয়াতন্ত্র, একটি মাফিয়া সরকার বন্ধ করে রেখেছে। সুতরাং পুলিশ চাবি না দেয়াতে তালা ভেঙে আমরা ঢুকেছি।
এদিকে কার্যালয় খোলার খবরে নয়াপল্টনে আসেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার মধ্যেই মুখর হয়ে উঠে পুরো কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। এসময় তারা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এদিকে, নয়াপল্টন কার্যালয়ের বিপরীতে ভাসানী মিলনায়তনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কার্যালয়ও প্রায় আড়াই মাস পর খোলা হয়।

সরকার সংসদকে কুক্ষিগত করেছে: মঈন খান
এদিকে বিকাল ৩টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, এই সরকার সংসদকে নিজেদের ইচ্ছামতো কুক্ষিগত করে নিয়েছে ভুয়া প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা আজকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ৭ই জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। আজকে জাতীয় সংসদের তিনশ’ সিটের মধ্যে ২৯৯ সিটে কে বিজয়ী, কে বিজেতা, কে জয়ী, কে পরাজিত সেগুলো নির্বাচনে নির্ধারিত হয় নাই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আগেই নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে কে কতো ভোট পাবে, কে কতো শতাংশ ভোট পাবে এবং কোন সিট থেকে কে নির্বাচিত হবে। এ বিষয়টি দেশে-বিদেশে প্রমাণসহ ‘উদ্ভাসিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মঈন। তিনি বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক, কলঙ্কজনক বিষয় হচ্ছে- মানুষের ভোট চুরি করে গোপনে আর এই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে প্রকাশ্যে। তারা প্রকাশ্যে আলোচনা করেছে, সিট ভাগাভাগি করেছে, কে কোন সিটে নির্বাচিত হবে সেটা নির্ধারণ করেছে। মঈন খান বলেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরকার দখল করে নিয়েছিল ২৮শে অক্টোবর ক্র্যাকডাউন করে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ মৃত। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লাখ লাখ মানুষ নিজেদের রক্ত দিয়েছি, এ অবস্থার জন্য নয়। সরকার বিশ্বাস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থায়। বিএনপি’র এ নীতি-নির্ধারক বলেন, এ দেশের মানুষ ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলেছে, এ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, সুষ্ঠু হয়নি। সাজানো নাটক করে যে নির্বাচনের আবহ তৈরি করেছে- তা বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে। মঈন খান বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি, থাকবো। আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। একটা সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করবো, ইনশাআল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মী ও কার্যালয়ের স্টাফরা: এদিকে দীর্ঘদিন পর নয়াপল্টন কার্যালয় খোলায় উচ্ছ্বসিত দলটির নেতাকর্মী ও অফিসের স্টাফরা। খোলার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যালয়ে উপচেপড়া ভিড় জমে। রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সবার চোখে-মুখে ছিল খুশির ছাপ।
বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে কোনো কার্যক্রম করতে পারিনি এই কার্যালয়ে। একপ্রকারের পুলিশি বেষ্টনীতে ছিল অফিসটি। দলের নেতাকর্মীরা অফিসে আসবে যাবে- এটা সবার প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন পর দলের অফিস খোলায় অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল বলেন, বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য এই কার্যালয়টি তীর্থস্থানের মতো। এখানে না এলে মনের মধ্যে তৃপ্তি আসে না।  নয়াপল্টন কার্যালয়ের কর্মচারী শামীম আজাদ জানান, অফিসটি বন্ধ থাকায় এতদিন মন খারাপ ছিল। অফিস খোলায় এখন থেকে প্রতিদিন অফিসে আসতে পারবো। তাই খুব ভালো লাগছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

তালা ভেঙে কার্যালয়ে বিএনপি নেতারা

আপডেট সময় ০১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

দীর্ঘ ৭৪ দিন পর তালা ভেঙে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে যান বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলটির শতাধিক নেতাকর্মী। এসময় হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙেন তারা। এরপর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।  ভেতরে প্রবেশের পর দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পুরো কার্যালয়ে ধুলোবালির স্তূপ জমে আছে। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল, কাজগপত্র, পত্রিকা।

কার্যালয়ে প্রবেশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। বলেন, ২৮শে অক্টোবরের তাণ্ডবের পর আপনাদের চোখের সামনে তালা লাগিয়ে পুলিশ চাবি নিয়ে যায়। এরপর কতো নাটক ওরা করেছে। আমরা পুলিশের কাছে চাবি চেয়েছিলাম। সেটা তারা দেয়নি।

তিনি বলেন, দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যকর রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দল বারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে। সেই দলের প্রধান কার্যালয় একটি মাফিয়াতন্ত্র, একটি মাফিয়া সরকার বন্ধ করে রেখেছে। সুতরাং পুলিশ চাবি না দেয়াতে তালা ভেঙে আমরা ঢুকেছি।
এদিকে কার্যালয় খোলার খবরে নয়াপল্টনে আসেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার মধ্যেই মুখর হয়ে উঠে পুরো কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। এসময় তারা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এদিকে, নয়াপল্টন কার্যালয়ের বিপরীতে ভাসানী মিলনায়তনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কার্যালয়ও প্রায় আড়াই মাস পর খোলা হয়।

সরকার সংসদকে কুক্ষিগত করেছে: মঈন খান
এদিকে বিকাল ৩টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, এই সরকার সংসদকে নিজেদের ইচ্ছামতো কুক্ষিগত করে নিয়েছে ভুয়া প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা আজকে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ৭ই জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। আজকে জাতীয় সংসদের তিনশ’ সিটের মধ্যে ২৯৯ সিটে কে বিজয়ী, কে বিজেতা, কে জয়ী, কে পরাজিত সেগুলো নির্বাচনে নির্ধারিত হয় নাই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আগেই নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে কে কতো ভোট পাবে, কে কতো শতাংশ ভোট পাবে এবং কোন সিট থেকে কে নির্বাচিত হবে। এ বিষয়টি দেশে-বিদেশে প্রমাণসহ ‘উদ্ভাসিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মঈন। তিনি বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক, কলঙ্কজনক বিষয় হচ্ছে- মানুষের ভোট চুরি করে গোপনে আর এই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে প্রকাশ্যে। তারা প্রকাশ্যে আলোচনা করেছে, সিট ভাগাভাগি করেছে, কে কোন সিটে নির্বাচিত হবে সেটা নির্ধারণ করেছে। মঈন খান বলেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরকার দখল করে নিয়েছিল ২৮শে অক্টোবর ক্র্যাকডাউন করে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ মৃত। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লাখ লাখ মানুষ নিজেদের রক্ত দিয়েছি, এ অবস্থার জন্য নয়। সরকার বিশ্বাস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থায়। বিএনপি’র এ নীতি-নির্ধারক বলেন, এ দেশের মানুষ ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলেছে, এ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, সুষ্ঠু হয়নি। সাজানো নাটক করে যে নির্বাচনের আবহ তৈরি করেছে- তা বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে। মঈন খান বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি, থাকবো। আমরা ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। একটা সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করবো, ইনশাআল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মী ও কার্যালয়ের স্টাফরা: এদিকে দীর্ঘদিন পর নয়াপল্টন কার্যালয় খোলায় উচ্ছ্বসিত দলটির নেতাকর্মী ও অফিসের স্টাফরা। খোলার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যালয়ে উপচেপড়া ভিড় জমে। রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সবার চোখে-মুখে ছিল খুশির ছাপ।
বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে কোনো কার্যক্রম করতে পারিনি এই কার্যালয়ে। একপ্রকারের পুলিশি বেষ্টনীতে ছিল অফিসটি। দলের নেতাকর্মীরা অফিসে আসবে যাবে- এটা সবার প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন পর দলের অফিস খোলায় অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল বলেন, বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য এই কার্যালয়টি তীর্থস্থানের মতো। এখানে না এলে মনের মধ্যে তৃপ্তি আসে না।  নয়াপল্টন কার্যালয়ের কর্মচারী শামীম আজাদ জানান, অফিসটি বন্ধ থাকায় এতদিন মন খারাপ ছিল। অফিস খোলায় এখন থেকে প্রতিদিন অফিসে আসতে পারবো। তাই খুব ভালো লাগছে।