ঢাকা ০৩:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রিজার্ভে যোগ হলো আইএমএফ ও এডিবি’র ঋণ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯ লাখ ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলারের ঋণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯.১৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ১৯.৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর আগে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চলতি ডিসেম্বরে বিভিন্ন উৎস থেকে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১.৩১ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ডিসেম্বরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা আগের ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৭.৭৮ বিলিয়ন নির্ধারণ করেছে আইএমএফ। শুক্রবার প্রকাশিত প্রথম রিভিউ প্রতিবেদনে এই নতুন শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। জুনের নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার। ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে আইএমএফ নিট রিজার্ভ সিলিং ঠিক করে দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সে তথ্য প্রকাশ করে না। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী, শুধু নিট রিজার্ভ অংশই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণেই বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থাটি ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো ছাড় করার জন্য নিট রিজার্ভের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়।

সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করেছে, প্রকাশিত ১৫.৯ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভের তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও দাবি করে যে, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার, যার পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য।
আইএমএফের রিভিউ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি যথেষ্ট সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও বড় অর্থনীতিগুলোর ক্রমাগত আর্থিক কঠোরতার মধ্যে অন্যান্য ছোট উন্মুক্ত অর্থনীতির মতোই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও বড় উত্থান-পতন হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারকে আরও নমনীয় করেছে, বিদ্যমান বিনিময় হারগুলোকে একীভূত করেছে এবং আর্থিক নীতি কঠোর করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার ১৫.২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। আমদানি সংকোচন এবং তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী রপ্তানির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি অনেকটাই কমেছে (২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল জিডিপি’র ৪.১ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয়েছে জিডিপি’র ০.৭ শতাংশ)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে অনুমোদিত ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার রিজার্ভের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অন্যান্য ঋণের আরও ৬২ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১৩১ কোটি ডলার। আর্থিক সংকটের সময়ে এটা আমাদের স্বস্তির খবর। আইএমএফ-এডিবি’র অর্থসহ রিজার্ভের হিসাবটা রোববার দিতে পারবো। এদিকে জানুয়ারির শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনাবাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমে যাবে। এর আগে আর কোনো বড় ধরনের দেনা পরিশোধ করতে হবে না। ফলে জানুয়ারির আগে আর রিজার্ভ কমছে না। তবে এখন আগামী রোজা উপলক্ষে আমদানি বাড়াতে হয়েছে। এজন্য ফেব্রুয়ারি থেকে রিজার্ভে আবার চাপ কিছুটা বাড়তে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে। তখন রিজার্ভ আবার বাড়বে। তবে মার্চের শুরুতে আবার আকুর দেনা শোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমবে। এদিকে এখন রিজার্ভের ওপর বড় চাপ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমদানি কমছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ রয়ে গেছে। তবে নতুন করে বৈদেশিক ঋণ নেয়া কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক ঋণ কমায় বাজারে ডলারের প্রবাহও কমেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওইদিনই অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মোস্তফা কামাল বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এদিকে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগ। সংবাদ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের ওপর কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিমাণগত পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়ার তিনটি বিষয়ের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া বাকি দুটি অর্জন করেছে। এ দুটি শর্ত সরকারের বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত। চারটি ইন্ডিকেটিভ টার্গেটের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া বাকি তিনটি পূরণ করেছে। এই তিনটি সরকারের সামাজিক ব্যয়, মূলধনী বিনিয়োগ এবং মুদ্রা সরবরাহ সংক্রান্ত শর্ত। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ কাঠামোগত সংস্কারের বেশির ভাগ শর্ত পূরণ করা হয়েছে।
রাহুল আনন্দ আরও বলেন, সার্বিক কর্মসূচির পারফরমেন্স বেশ সন্তোষজনক। এর প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং বাহ্যিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক নীতি আরও কঠোর করা, যা আর্থিক নীতির পক্ষে দৃঢ় সমর্থনে থাকতে হবে। একই সময়ে আরও নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে এবং বাহ্যিক ‘বাফার’ বিনির্মাণে সহায়তা করবে। এর সঙ্গে প্রবৃদ্ধিকে বাড়ানোর সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আইএমএফের সদস্য দেশগুলো ২০১২ সাল থেকে ব্যালান্স অব পেমেন্টস ও ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী

রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশ তা করছিল না। আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ গণনায় গত জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া কিছু অর্থও দায় হিসেবে বাদ দেয়া হয়। আরও কিছু খাতের অর্থ নিট রিজার্ভের হিসাবে ধরা যায় না। ফলে এটি দাঁড়ায় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
আইএমএফের রাহুল আনন্দ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা আছে। দেশটির উচিত হবে এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দেয়া। রাজস্ব আদায় ভালো হলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করার সক্ষমতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

রিজার্ভে যোগ হলো আইএমএফ ও এডিবি’র ঋণ

আপডেট সময় ০২:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯ লাখ ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪০ কোটি ডলারের ঋণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯.১৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ১৯.৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এর আগে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চলতি ডিসেম্বরে বিভিন্ন উৎস থেকে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১.৩১ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ডিসেম্বরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা আগের ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৭.৭৮ বিলিয়ন নির্ধারণ করেছে আইএমএফ। শুক্রবার প্রকাশিত প্রথম রিভিউ প্রতিবেদনে এই নতুন শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। জুনের নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার। ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে আইএমএফ নিট রিজার্ভ সিলিং ঠিক করে দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সে তথ্য প্রকাশ করে না। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী, শুধু নিট রিজার্ভ অংশই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণেই বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থাটি ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো ছাড় করার জন্য নিট রিজার্ভের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়।

সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করেছে, প্রকাশিত ১৫.৯ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভের তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও দাবি করে যে, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলার, যার পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য।
আইএমএফের রিভিউ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি যথেষ্ট সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও বড় অর্থনীতিগুলোর ক্রমাগত আর্থিক কঠোরতার মধ্যে অন্যান্য ছোট উন্মুক্ত অর্থনীতির মতোই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও বড় উত্থান-পতন হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারকে আরও নমনীয় করেছে, বিদ্যমান বিনিময় হারগুলোকে একীভূত করেছে এবং আর্থিক নীতি কঠোর করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার ১৫.২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। আমদানি সংকোচন এবং তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী রপ্তানির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি অনেকটাই কমেছে (২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল জিডিপি’র ৪.১ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয়েছে জিডিপি’র ০.৭ শতাংশ)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে অনুমোদিত ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার রিজার্ভের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অন্যান্য ঋণের আরও ৬২ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মাসে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১৩১ কোটি ডলার। আর্থিক সংকটের সময়ে এটা আমাদের স্বস্তির খবর। আইএমএফ-এডিবি’র অর্থসহ রিজার্ভের হিসাবটা রোববার দিতে পারবো। এদিকে জানুয়ারির শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনাবাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমে যাবে। এর আগে আর কোনো বড় ধরনের দেনা পরিশোধ করতে হবে না। ফলে জানুয়ারির আগে আর রিজার্ভ কমছে না। তবে এখন আগামী রোজা উপলক্ষে আমদানি বাড়াতে হয়েছে। এজন্য ফেব্রুয়ারি থেকে রিজার্ভে আবার চাপ কিছুটা বাড়তে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে। তখন রিজার্ভ আবার বাড়বে। তবে মার্চের শুরুতে আবার আকুর দেনা শোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমবে। এদিকে এখন রিজার্ভের ওপর বড় চাপ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমদানি কমছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ রয়ে গেছে। তবে নতুন করে বৈদেশিক ঋণ নেয়া কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক ঋণ কমায় বাজারে ডলারের প্রবাহও কমেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে। ওইদিনই অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মোস্তফা কামাল বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এদিকে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইএমএফের এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগ। সংবাদ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের ওপর কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিমাণগত পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়ার তিনটি বিষয়ের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া বাকি দুটি অর্জন করেছে। এ দুটি শর্ত সরকারের বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত। চারটি ইন্ডিকেটিভ টার্গেটের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া বাকি তিনটি পূরণ করেছে। এই তিনটি সরকারের সামাজিক ব্যয়, মূলধনী বিনিয়োগ এবং মুদ্রা সরবরাহ সংক্রান্ত শর্ত। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ কাঠামোগত সংস্কারের বেশির ভাগ শর্ত পূরণ করা হয়েছে।
রাহুল আনন্দ আরও বলেন, সার্বিক কর্মসূচির পারফরমেন্স বেশ সন্তোষজনক। এর প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং বাহ্যিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক নীতি আরও কঠোর করা, যা আর্থিক নীতির পক্ষে দৃঢ় সমর্থনে থাকতে হবে। একই সময়ে আরও নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে এবং বাহ্যিক ‘বাফার’ বিনির্মাণে সহায়তা করবে। এর সঙ্গে প্রবৃদ্ধিকে বাড়ানোর সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আইএমএফের সদস্য দেশগুলো ২০১২ সাল থেকে ব্যালান্স অব পেমেন্টস ও ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী

রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশ তা করছিল না। আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ গণনায় গত জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া কিছু অর্থও দায় হিসেবে বাদ দেয়া হয়। আরও কিছু খাতের অর্থ নিট রিজার্ভের হিসাবে ধরা যায় না। ফলে এটি দাঁড়ায় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
আইএমএফের রাহুল আনন্দ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা আছে। দেশটির উচিত হবে এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দেয়া। রাজস্ব আদায় ভালো হলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করার সক্ষমতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।