ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিমানবন্দরে হাসি-কান্নার গল্প

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

মো. শাহিন। একযুগ আগে স্ত্রী ও ছোট্ট দুই সন্তানকে রেখে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। পরিবারের ভালো থাকার জন্য টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে গত দশ বছর দেশে আসার সুযোগ পাননি। সরাসরি দেখা হয়নি পরিবারের কারোর সঙ্গে। ৫ বছরের ছেলে শাকিল এখন ৯ম শ্রেণির ছাত্র। আর ১১ মাসের রেখে যাওয়া ছোট্ট ছেলে সাকিবুল হাসান এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আসার খবর পেয়ে আগের দিন রাত থেকেই দুই সন্তানের প্রস্তুতি। নরসিংদীর মাধবদী থেকে সোমবার ভোর রাতে চাচা শ্বশুর মো. শাহ্‌ আলীর সঙ্গে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন শাহীনের স্ত্রী। সঙ্গে দুই সন্তান। বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২’র রেলিং-এর উপর বসে অপেক্ষা করছিলেন তারা।

বেলা দুইটার দিকে পৌঁছায় শাহিনকে বহন করা বিমান। টার্মিনাল-২’র গেট দিয়ে শাহিন বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এ যেন এক বাঁধভাঙা খুশি। শাহিনও দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন সকলকে। চাচা শাহ্‌ আলমকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেন শাহিনও। আর  পেছন থেকে বাবাকে জড়িয়ে ধরে শাহীনের দুই ছেলে।

শাহিন বলেন, এই দশ বছর বিদেশের মাটিতে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক ত্যাগ করেছি। কতো কিছু হয়ে গেছে তবুও দেশে আসতে পারেনি। এই দশ বছরে অন্তত বিশটা ঈদ গেছে, কখনো বাচ্চা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে পারিনি। ১১ মাসের ছোট ছেলেটা আজ কতো বড় হয়ে গেছে, কখনো কোলে নিতে পারিনি। তাদের অসুস্থতা, হাসি-কান্না সবই দূর থেকে শুধু শুনেছি, নিজে থেকে কিছুই করতে পারেনি। কতো কিছু ওর মাকে একা হাতে সামাল দিতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আজ ওদের দেখে সেসব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এখন যে কয়টা দিন দেশে থাকবো সব সময় ওদেরকে নিয়েই থাকবো।

দশ বছর পর বাবাকে পাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে শাহিনের বড় ছেলে মো. শাকিল বলেন, বাবা যখন বিদেশে যান তখন আমরা অনেক ছোট ছিলাম। তেমন কিছুই মনে নেই। এত দিন বাবাকে শুধু ভিডিওকলে দেখতাম। সারাদিন কাজ শেষে যখন মায়ের ফোনে কল দিতো তখনই তাকে দেখতে পেতাম। এখন সরাসরি দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। বাবা আজ আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা একসঙ্গে ঘুমাবো। একসঙ্গে খাবার খাবো। কতো মজা হবে।

শাহিনের পরের ফ্লাইটেই ৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন নাজমা বেগম। তিনিও পরিবারের সুখের চিন্তায় পাড়ি জমান লেবাননে। সেখানে দু’বছর থাকার পর যান সৌদি আরবে। দীর্ঘ পাঁচ বছর সৌদির জেদ্দা শহরের এক বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে ফেরায় তাকে দেখতে স্বামী শহিদুল গাজীর সঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার হেনা ও ছোট মেয়ে সাদিয়া আক্তার মিম। দুপুরে নাজমা বেগম শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১’র গেট দিয়ে বের হয়েই দেখতে পান সামনে তার রেখে যাওয়া ছোট্ট দুই সন্তান দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত দিন পর সন্তানদের পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেন মা নাজমা। পাশে গিয়ে দাঁড়ান স্বামী শহিদুল। এসময় নাজমা বেগম বলেন, কতো দিন আমার সন্তানদেরকে সামনাসামনি দেখি না। কতো দিন ওদেরকে ছুঁয়ে দেখি না। আজ সাত বছর পর ওদেরকে কাছে পেলাম। তিনি বলেন, যখন আমি বিদেশে যাই তখন আমার দুই মেয়েই কতো ছোট ছিল। এখন আমার বড় মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে আর ছোট মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেনে। আমি ওদের পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। আমার কলিজার টুকরোগুলো কতো বড় হয়ে গেছে। সৌদি আরবে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি এক আপার মাধ্যমে সেখানে গিয়েছিলাম। ওরা অনেক ভালো। আমার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করেছেন। আমি দেশে আসবো শুনে কোনোভাবেই তারা আমাকে ছাড়তে চাচ্ছিল না। আমি তাদেরকে বলেছি, আমি কিছুদিন থেকেই আবার চলে আসবো।

নাজমার মতো সাবিনা আক্তারও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বছর পাঁচেক আগে সৌদি আরবে যান। তিনিও সেখানে গৃহস্থালির কাজ করতেন। দেশে ফেরার কথা শুনে তাকে নিতে ফেনী থেকে ঢাকায় আসেন তার ছোট বোন রোজিনা। শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনি বলেন, আমার বোন সারাটা জীবন অনেক কষ্ট করেছেন। স্বামী নেই। ছোট ছোট তিনটা মেয়ে রেখে পাঁচ বছর আগে সৌদি যান। সেখান থেকে যেই টাকা-পয়সা পাঠান, তাই দিয়ে দেশে সংসার চলে। তিনি বলেন, এমন দিন গেছে আমরা দিনে একবেলা খেয়েছি তো আর দু’বেলা খাবার পাইনি। এখন ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আপা বিদেশ যাওয়ায় তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারি। সাবিনা আক্তার বলেন, দেশে থাকতে খুব অসহায় ছিলাম। ঠিক করে খেতেও পাইনি। অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা জমিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে কতো মানুষ কতো কথা বলতো, মেয়ে মানুষ বিদেশে যাওয়া ভালো না।

বড় স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ গিয়ে ৭ মাসের মাথায় হতাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন বরগুনার মো. আরাফাত হোসেন। বিমানবন্দরে আরাফাত হোসেন বলেন, গত ৭ মাস আগে আমাদের বরগুনার গুলগুনা এলাকার মো. লিটন নামে এক দালালের প্ররোচনায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে কাতারে যাই। সে সময় দালাল লিটন বলেন ওখানে গেলেই কাজ পাওয়া যাবে। কাজের কোনো অভাব নেই। যেই টাকা লোন নিয়েছি তা বছরখানেকের মধ্যেই শোধ করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে ওখানে তেমন কোনো কাজ নেই। যা কাজ ছিল তা গত বিশ্বকাপ খেলার পর শেষ হয়ে গেছে। এখন যা দুই একজন কাজ করছে তাও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাতারে যাওয়ার পর সেখানে একটি কাজে ঢুকি। বেতন খুবই কম। এরপর আরেকটি কাজে যাই। সেটাও বেশিদিন চলেনি। টাকা দেয় না। এরপর আমাদের দেশের একজনের মাধ্যমে আরেকটি কাজ নিই। তাতে ২৭’শ রিয়েল দেয়ার কথা। যা বাংলাদেশি ৮০ হাজারের উপরে। কিন্তু ঈদের দিনে ১০০ রিয়েল হাতে দিয়ে আমাদেরকে বের করে দেয়া হয়। আমি দেশের ওই লোককে ফোন দিলে তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘুরতে কক্সবাজারে গিয়েছেন তিনি। বলেন, দেশে ফিরে গেলে চলে যাও। আরাফাত হোসেন বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি ওখানে কাজের জন্য যাই, তারা খুব অসহায়ভাবে দিনযাপন করি। একে তো ধারদেনা করে বিদেশ গিয়েছি। তারপর ওখানে গিয়েও প্রতি মাসে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়েছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

বিমানবন্দরে হাসি-কান্নার গল্প

আপডেট সময় ০৯:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

মো. শাহিন। একযুগ আগে স্ত্রী ও ছোট্ট দুই সন্তানকে রেখে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। পরিবারের ভালো থাকার জন্য টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে গত দশ বছর দেশে আসার সুযোগ পাননি। সরাসরি দেখা হয়নি পরিবারের কারোর সঙ্গে। ৫ বছরের ছেলে শাকিল এখন ৯ম শ্রেণির ছাত্র। আর ১১ মাসের রেখে যাওয়া ছোট্ট ছেলে সাকিবুল হাসান এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আসার খবর পেয়ে আগের দিন রাত থেকেই দুই সন্তানের প্রস্তুতি। নরসিংদীর মাধবদী থেকে সোমবার ভোর রাতে চাচা শ্বশুর মো. শাহ্‌ আলীর সঙ্গে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন শাহীনের স্ত্রী। সঙ্গে দুই সন্তান। বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২’র রেলিং-এর উপর বসে অপেক্ষা করছিলেন তারা।

বেলা দুইটার দিকে পৌঁছায় শাহিনকে বহন করা বিমান। টার্মিনাল-২’র গেট দিয়ে শাহিন বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এ যেন এক বাঁধভাঙা খুশি। শাহিনও দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন সকলকে। চাচা শাহ্‌ আলমকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেন শাহিনও। আর  পেছন থেকে বাবাকে জড়িয়ে ধরে শাহীনের দুই ছেলে।

শাহিন বলেন, এই দশ বছর বিদেশের মাটিতে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক ত্যাগ করেছি। কতো কিছু হয়ে গেছে তবুও দেশে আসতে পারেনি। এই দশ বছরে অন্তত বিশটা ঈদ গেছে, কখনো বাচ্চা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে পারিনি। ১১ মাসের ছোট ছেলেটা আজ কতো বড় হয়ে গেছে, কখনো কোলে নিতে পারিনি। তাদের অসুস্থতা, হাসি-কান্না সবই দূর থেকে শুধু শুনেছি, নিজে থেকে কিছুই করতে পারেনি। কতো কিছু ওর মাকে একা হাতে সামাল দিতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আজ ওদের দেখে সেসব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এখন যে কয়টা দিন দেশে থাকবো সব সময় ওদেরকে নিয়েই থাকবো।

দশ বছর পর বাবাকে পাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে শাহিনের বড় ছেলে মো. শাকিল বলেন, বাবা যখন বিদেশে যান তখন আমরা অনেক ছোট ছিলাম। তেমন কিছুই মনে নেই। এত দিন বাবাকে শুধু ভিডিওকলে দেখতাম। সারাদিন কাজ শেষে যখন মায়ের ফোনে কল দিতো তখনই তাকে দেখতে পেতাম। এখন সরাসরি দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। বাবা আজ আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা একসঙ্গে ঘুমাবো। একসঙ্গে খাবার খাবো। কতো মজা হবে।

শাহিনের পরের ফ্লাইটেই ৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন নাজমা বেগম। তিনিও পরিবারের সুখের চিন্তায় পাড়ি জমান লেবাননে। সেখানে দু’বছর থাকার পর যান সৌদি আরবে। দীর্ঘ পাঁচ বছর সৌদির জেদ্দা শহরের এক বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে ফেরায় তাকে দেখতে স্বামী শহিদুল গাজীর সঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার হেনা ও ছোট মেয়ে সাদিয়া আক্তার মিম। দুপুরে নাজমা বেগম শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১’র গেট দিয়ে বের হয়েই দেখতে পান সামনে তার রেখে যাওয়া ছোট্ট দুই সন্তান দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত দিন পর সন্তানদের পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেন মা নাজমা। পাশে গিয়ে দাঁড়ান স্বামী শহিদুল। এসময় নাজমা বেগম বলেন, কতো দিন আমার সন্তানদেরকে সামনাসামনি দেখি না। কতো দিন ওদেরকে ছুঁয়ে দেখি না। আজ সাত বছর পর ওদেরকে কাছে পেলাম। তিনি বলেন, যখন আমি বিদেশে যাই তখন আমার দুই মেয়েই কতো ছোট ছিল। এখন আমার বড় মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে আর ছোট মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেনে। আমি ওদের পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। আমার কলিজার টুকরোগুলো কতো বড় হয়ে গেছে। সৌদি আরবে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি এক আপার মাধ্যমে সেখানে গিয়েছিলাম। ওরা অনেক ভালো। আমার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করেছেন। আমি দেশে আসবো শুনে কোনোভাবেই তারা আমাকে ছাড়তে চাচ্ছিল না। আমি তাদেরকে বলেছি, আমি কিছুদিন থেকেই আবার চলে আসবো।

নাজমার মতো সাবিনা আক্তারও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বছর পাঁচেক আগে সৌদি আরবে যান। তিনিও সেখানে গৃহস্থালির কাজ করতেন। দেশে ফেরার কথা শুনে তাকে নিতে ফেনী থেকে ঢাকায় আসেন তার ছোট বোন রোজিনা। শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনি বলেন, আমার বোন সারাটা জীবন অনেক কষ্ট করেছেন। স্বামী নেই। ছোট ছোট তিনটা মেয়ে রেখে পাঁচ বছর আগে সৌদি যান। সেখান থেকে যেই টাকা-পয়সা পাঠান, তাই দিয়ে দেশে সংসার চলে। তিনি বলেন, এমন দিন গেছে আমরা দিনে একবেলা খেয়েছি তো আর দু’বেলা খাবার পাইনি। এখন ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আপা বিদেশ যাওয়ায় তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারি। সাবিনা আক্তার বলেন, দেশে থাকতে খুব অসহায় ছিলাম। ঠিক করে খেতেও পাইনি। অনেক কষ্টে টাকা-পয়সা জমিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগে কতো মানুষ কতো কথা বলতো, মেয়ে মানুষ বিদেশে যাওয়া ভালো না।

বড় স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ গিয়ে ৭ মাসের মাথায় হতাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন বরগুনার মো. আরাফাত হোসেন। বিমানবন্দরে আরাফাত হোসেন বলেন, গত ৭ মাস আগে আমাদের বরগুনার গুলগুনা এলাকার মো. লিটন নামে এক দালালের প্ররোচনায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে কাতারে যাই। সে সময় দালাল লিটন বলেন ওখানে গেলেই কাজ পাওয়া যাবে। কাজের কোনো অভাব নেই। যেই টাকা লোন নিয়েছি তা বছরখানেকের মধ্যেই শোধ করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে ওখানে তেমন কোনো কাজ নেই। যা কাজ ছিল তা গত বিশ্বকাপ খেলার পর শেষ হয়ে গেছে। এখন যা দুই একজন কাজ করছে তাও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাতারে যাওয়ার পর সেখানে একটি কাজে ঢুকি। বেতন খুবই কম। এরপর আরেকটি কাজে যাই। সেটাও বেশিদিন চলেনি। টাকা দেয় না। এরপর আমাদের দেশের একজনের মাধ্যমে আরেকটি কাজ নিই। তাতে ২৭’শ রিয়েল দেয়ার কথা। যা বাংলাদেশি ৮০ হাজারের উপরে। কিন্তু ঈদের দিনে ১০০ রিয়েল হাতে দিয়ে আমাদেরকে বের করে দেয়া হয়। আমি দেশের ওই লোককে ফোন দিলে তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘুরতে কক্সবাজারে গিয়েছেন তিনি। বলেন, দেশে ফিরে গেলে চলে যাও। আরাফাত হোসেন বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি ওখানে কাজের জন্য যাই, তারা খুব অসহায়ভাবে দিনযাপন করি। একে তো ধারদেনা করে বিদেশ গিয়েছি। তারপর ওখানে গিয়েও প্রতি মাসে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়েছে।