ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচন কার্যত প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও মেয়র ইমামোগলুর লড়াই

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৩৭:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

তুরস্কে বিরোধীরা নাকি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান শক্তিশালী তার প্রমাণ হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। সেখানে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচন হয় গতকাল। এই নির্বাচনে কে বা কারা বড় বড় শহরকে পরিচালনা করবে, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন দেশটির জনগণ। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলকে বলা হয় তুরস্কের অর্থনীতি ও সামাজিক পাওয়ার হাউজ। ৫ বছর আগে একীভূত বিরোধী দল সেখানে নির্বাচনে জয়ী হয় জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোগলুর অধীনে। এর মধ্যদিয়ে নির্বাচনের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের যে দীর্ঘদিনের সফলতা ছিল তা চুরমার হয়ে যায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের এই মেগাসিটিতে জন্ম এরদোগানের। তিনি বিরোধীদের কবল থেকে এই শহরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চান। কিন্তু ভোট হবে ‘ধারালো ছুরির’ ওপর। তারপরও যা-ই ঘটুক ইস্তাম্বুলে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হবে।

তা হলো, এরদোগানের বিরুদ্ধে এবং তার একে পার্টির বিরুদ্ধে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় কোনো হুমকি হয়ে উঠতে পারে কিনা তারা। ইস্তাম্বুল মেডিপোল ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিভাগের এবং জেনার পলিটিক্যাল রিসার্স সেন্টারের চেয়ার ইহসান আকতাস বলেন, ইস্তাম্বুল হলো এরদোগানের জন্মস্থান। ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলে স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয় ছিল তার কাছে বিপর্যয়। তিনি ওই শহরে বেড়ে উঠেছেন। ১৯৭০-এর দশকে রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি সিমিটস নামের ব্রেডস্ন্যাক্স বিক্রি করেছেন এই শহরে।

বেয়োগলুথেন জেলায় ইসলামপন্থি একটি দলের প্রধান ছিলেন তিনি। সেখান থেকে মেয়র, প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বশেষ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত বছর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এবারে নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি  আশা করছে বড় শহরগুলোকে তাদের দখলে নেয়ার, যেমনটা তারা ৫ বছর আগে নাটকীয়ভাবে জিতেছিল। শুধু ইস্তাম্বুল নয়, রাজধানী আঙ্কারা এবং পর্যটন শহর আন্তালিয়াও তারা নিজেদের দখলে নিতে চায়।
সর্বশেষ এই দুটি বড় শহরকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছর ধরে শাসন করছে ক্ষমতাসীন একে পার্টি এবং তার ইসলামপন্থি উত্তারাধিকারীরা। এমনকি ইস্তাম্বুলে এরদোগানের প্রার্থীকে দু’বার হারিয়েছে বিরোধীরা। তবে একেপির দাবি, ওই নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছিল এবং নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।

ইসিক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর সিদা দেমিরালপ বলেন, গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের কাছে বিরোধীরা পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও, ইস্তাম্বুলে জয় এবং তুরস্কে জয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, ইমামোগলু যদি ইস্তাম্বুল ধরে রাখতে পারেন, তাহলে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা আরও বড় আশা করতে পারেন। ইহসান আকতাস একমত প্রকাশ করেন যে, যে-ই বিজয়ী হোন না কেন ইস্তাম্বুলের বাইরেও তার বড় প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, যখন ইস্তাম্বুল আপনাকে সমর্থন দেবে, তখন আপনি জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি একজন অ্যাক্টর হয়ে উঠবেন।

তুরস্কের জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ। এর এক পঞ্চমাংশ বসবাস করেন এই শহরে। ফলে এখানে ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতি, জাতি, ধর্ম ও অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের বসবাস। তাদের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। যদি এই ইস্তাম্বুলকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায়, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি, পর্যটন, আর্থিক খাত সহ বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে বিজয়ীরা। ইস্তাম্বুলে এরদোগানের দলের প্রার্থী মুরাত কুরুম। তিনি ৪৭ বছর বয়সী পরিবেশ ও নগরায়ন বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী। তবে এই লড়াইটাকে দেখা হচ্ছে এরদোগান ও একরেম ইমামোগলুর মধ্যে প্রতিযোগিতা হিসেবে।

ইমামোগলু ৫২ বছর বয়সী সাবেক একজন ব্যবসায়ী। শহরটির স্বল্পপরিচিত মধ্যম আয়ের এলাকা বেলিকদুজুর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ক্রমশ খ্যাতি বাড়াচ্ছেন। তাকেই কয়েক দশক ধরে এরদোগানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্চে সমর্থকদের নিয়ে তিনি একটি নির্বাচনী র‌্যালি করেন। সেখানে বলেন, ২০১৯ এর চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। ৩১শে মার্চ একটি নতুন ইতিহাস হবে। যদি এই নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারেন, তাহলে তার রাজনৈতিক আর একটি বড় অর্জন যোগ হবে। আগামী চার বছরের মধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ বের করে ফেলবেন। এরই মধ্যে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন আঙ্কারার মেয়র মানসুর ইয়াভাস। রোববারের নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন এমনটা জোর দিয়ে বলা যায়।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসি

তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচন কার্যত প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও মেয়র ইমামোগলুর লড়াই

আপডেট সময় ০৪:৩৭:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

তুরস্কে বিরোধীরা নাকি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান শক্তিশালী তার প্রমাণ হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। সেখানে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচন হয় গতকাল। এই নির্বাচনে কে বা কারা বড় বড় শহরকে পরিচালনা করবে, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন দেশটির জনগণ। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলকে বলা হয় তুরস্কের অর্থনীতি ও সামাজিক পাওয়ার হাউজ। ৫ বছর আগে একীভূত বিরোধী দল সেখানে নির্বাচনে জয়ী হয় জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোগলুর অধীনে। এর মধ্যদিয়ে নির্বাচনের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের যে দীর্ঘদিনের সফলতা ছিল তা চুরমার হয়ে যায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের এই মেগাসিটিতে জন্ম এরদোগানের। তিনি বিরোধীদের কবল থেকে এই শহরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চান। কিন্তু ভোট হবে ‘ধারালো ছুরির’ ওপর। তারপরও যা-ই ঘটুক ইস্তাম্বুলে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হবে।

তা হলো, এরদোগানের বিরুদ্ধে এবং তার একে পার্টির বিরুদ্ধে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় কোনো হুমকি হয়ে উঠতে পারে কিনা তারা। ইস্তাম্বুল মেডিপোল ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিভাগের এবং জেনার পলিটিক্যাল রিসার্স সেন্টারের চেয়ার ইহসান আকতাস বলেন, ইস্তাম্বুল হলো এরদোগানের জন্মস্থান। ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলে স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয় ছিল তার কাছে বিপর্যয়। তিনি ওই শহরে বেড়ে উঠেছেন। ১৯৭০-এর দশকে রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি সিমিটস নামের ব্রেডস্ন্যাক্স বিক্রি করেছেন এই শহরে।

বেয়োগলুথেন জেলায় ইসলামপন্থি একটি দলের প্রধান ছিলেন তিনি। সেখান থেকে মেয়র, প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বশেষ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত বছর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এবারে নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি  আশা করছে বড় শহরগুলোকে তাদের দখলে নেয়ার, যেমনটা তারা ৫ বছর আগে নাটকীয়ভাবে জিতেছিল। শুধু ইস্তাম্বুল নয়, রাজধানী আঙ্কারা এবং পর্যটন শহর আন্তালিয়াও তারা নিজেদের দখলে নিতে চায়।
সর্বশেষ এই দুটি বড় শহরকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছর ধরে শাসন করছে ক্ষমতাসীন একে পার্টি এবং তার ইসলামপন্থি উত্তারাধিকারীরা। এমনকি ইস্তাম্বুলে এরদোগানের প্রার্থীকে দু’বার হারিয়েছে বিরোধীরা। তবে একেপির দাবি, ওই নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছিল এবং নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্মকর্তারা।

ইসিক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর সিদা দেমিরালপ বলেন, গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের কাছে বিরোধীরা পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও, ইস্তাম্বুলে জয় এবং তুরস্কে জয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, ইমামোগলু যদি ইস্তাম্বুল ধরে রাখতে পারেন, তাহলে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা আরও বড় আশা করতে পারেন। ইহসান আকতাস একমত প্রকাশ করেন যে, যে-ই বিজয়ী হোন না কেন ইস্তাম্বুলের বাইরেও তার বড় প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, যখন ইস্তাম্বুল আপনাকে সমর্থন দেবে, তখন আপনি জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি একজন অ্যাক্টর হয়ে উঠবেন।

তুরস্কের জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ। এর এক পঞ্চমাংশ বসবাস করেন এই শহরে। ফলে এখানে ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতি, জাতি, ধর্ম ও অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের বসবাস। তাদের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। যদি এই ইস্তাম্বুলকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায়, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি, পর্যটন, আর্থিক খাত সহ বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে বিজয়ীরা। ইস্তাম্বুলে এরদোগানের দলের প্রার্থী মুরাত কুরুম। তিনি ৪৭ বছর বয়সী পরিবেশ ও নগরায়ন বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী। তবে এই লড়াইটাকে দেখা হচ্ছে এরদোগান ও একরেম ইমামোগলুর মধ্যে প্রতিযোগিতা হিসেবে।

ইমামোগলু ৫২ বছর বয়সী সাবেক একজন ব্যবসায়ী। শহরটির স্বল্পপরিচিত মধ্যম আয়ের এলাকা বেলিকদুজুর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ক্রমশ খ্যাতি বাড়াচ্ছেন। তাকেই কয়েক দশক ধরে এরদোগানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্চে সমর্থকদের নিয়ে তিনি একটি নির্বাচনী র‌্যালি করেন। সেখানে বলেন, ২০১৯ এর চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। ৩১শে মার্চ একটি নতুন ইতিহাস হবে। যদি এই নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারেন, তাহলে তার রাজনৈতিক আর একটি বড় অর্জন যোগ হবে। আগামী চার বছরের মধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ বের করে ফেলবেন। এরই মধ্যে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন আঙ্কারার মেয়র মানসুর ইয়াভাস। রোববারের নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন এমনটা জোর দিয়ে বলা যায়।